কলাপাড়ায় দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ভিজিডি চাল বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অভাবগ্রস্ত ও দুস্থ নারীদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দকৃত ভিজিডি চাল বিতরণের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। সরেজমিন অনুসন্ধানে সত্যতাও মিলেছে অভিযোগের। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল গাজী, যিনি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া অপর অভিযুক্ত ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জসিম ফরাজী ওরফে লাদেন জসিম। তিনি আওয়ামী লীগের ২নং ওয়ার্ড সভাপতির পদপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরপরই তিনি অদৃশ্য শক্তির আশির্বাদে একই ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি বনে যান। তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে অতীতেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুই ইউপি সদস্য ভিজিডি চাল দেওয়ার নামে প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন। অভিযোগ ওঠার পর বাবুল গাজী স্বীকার করেছেন, তিনি কিছু মানুষের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তা ফেরত দিয়েছেন। অন্যদিকে জসিম ফরাজী জানিয়েছেন, তিনি জনপ্রতি ২০০ টাকা করে ‘গাড়িভাড়া বাবদ’ নিয়েছেন। যদিও একাধিক ভুক্তভোগী দাবি করেছেন, তাদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। অভিযোগকারী ইসমাইল মোল্লা বলেন, ‘সরকার গরিবের জন্য চাল দেয়, অথচ বাবুল মেম্বার আমাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছে।’ স্থানীয় এক গৃহবধূ আছিয়া বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। চাল পেতে জসিম মেম্বার ১ হাজার টাকা নিয়েছে। সে বলছে, এটা নাকি নিয়ম। তাই বাধ্য হয়ে ধার করে দিয়েছি।’ রফিক নামে আরেকজন অভিযোগকারী বলেন, ‘পাঁচ মাসের চাল দেওয়ার কথা বলে মেম্বার আমার স্ত্রীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়েছে।’ আরেক ভুক্তভোগী জামিলা খাতুন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে চেয়েছে। ৫ মাসে ১,০০০ টাকা নিয়েছে, কিন্তু চাল পেয়েছি ৪ মাসের।’ স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিষয়টির সঙ্গে শুধু ইউপি সদস্যরাই নন, বিএনপির নেতারাও জড়িত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপির এক নেতা জানান, জসিম মেম্বার ও বাবুল মেম্বার দুজনেই টাকা নিয়েছেন, বিষয়টি সত্য। এর সাথে বিএনপির লোকজনও জড়িত বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বাবুল গাজী বলেন, ‘কয়েকজনের কাছ থেকে খরচ বাবদ ১ হাজার টাকা করে নিয়েছিলাম। পরে তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি।’ অপর অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জসিম ফরাজী বলেন, ‘গাড়িভাড়া বাবদ ২০০ টাকা করে নিয়েছি। ৫'শ-১ হাজারের বিষয়টি সঠিক নয়।’ এ বিষয়ে ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ জোহাদী বলেন, ‘ভিজিডি চাল দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তাদের নোটিশ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের ভিজিডি কার্যক্রমে কোনোভাবেই অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও এলাকায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, গরিবের হক কেড়ে যারা টাকা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কি আদৌ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে!
What's Your Reaction?






