বাঁধ ভাঙায় কান্নায় ভাসছে তজুমদ্দিনের মেঘনাতীরের মানুষ

আফছার উদ্দিন ফরিদ, তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীতীরবর্তী স্লুইসগেট বাঁধ হঠাৎ ভেঙে পড়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার নদী তীরবর্তী মানুষ। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেল ৩টার দিকে ঘটে যাওয়া এই ভাঙনের ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে বইছে হাহাকার আর কান্নার স্রোত।
বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড স্রোতে গ্রামে ঢুকে পড়ে নদীর পানি। মুহূর্তেই ডুবে যায় শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি ও চলাচলের রাস্তা। আতঙ্কিত মানুষজন যার যার ঘরবাড়ি ফেলে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ইতোমধ্যে স্লুইসগেট এলাকার ছয়টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্লুইসগেট নির্মাণে অব্যবস্থাপনা, বিলম্ব এবং দুর্নীতির কারণেই এ দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। তারা জানান, বারবার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদাররা নির্মাণকাজে গাফিলতি করেছে।
একজন অসহায় গ্রামবাসী চোখ মুছতে মুছতে বলেন,
“আমরা আগেই বলছিলাম, বাঁধটা ঠিকঠাক করেন। কিন্তু কেউ শোনে নাই। উল্টো যেসব মাটি বাঁধে লাগার কথা, সেইটা কেটে বিক্রি করছে। এখন আমরা ডুইবা গেলাম—আমাগো সর্বনাশ হইলো!”
ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভ দেবনাথ। তিনি বলেন,
“বাঁধ ভাঙায় মানুষ বিপাকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং প্রাথমিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ৫০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বাঁধ নির্মাণে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত মাটি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ঠিকাদারের যোগসাজশে কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এতে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ধসে পড়ে।
আরেকজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“যারা বাধা দিয়েছিল, তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এখন সব শেষ। আগে যদি ব্যবস্থা হতো, আজ এই কান্দন থাকতো না।”
এলাকায় বর্তমানে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন, যাতে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। একইসঙ্গে দ্রুত স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ এবং নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি উঠেছে।স্থানীয়দের একটাই প্রশ্ন—
“আমাদের জীবনের এমন বিপর্যয় আর কতবার দেখতে হবে? তজুমদ্দিনের মানুষ কবে পাবে টেকসই নিরাপত্তা?
What's Your Reaction?






