31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪

কয়রায় মহিলাদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
নৌকায় নারী মাঝিদের কন্ঠে ভেসে আসছিল গ্রামবাংলার চিরন্তন আঞ্চলিক জারি গান। ঢাক-ঢোলের তালে তালে সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে গিয়েছিল হাজার উৎসুক দর্শকও। সব মিলিয়ে ১৬ নভেম্বর, শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনার কয়রা উপজেলার শুড়ীখালী এলাকার ঘোষখালী খালের পাড়ে বিরাজ করছিল অন্যরকম দৃশ্য।

খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী এলাকার শুড়িখালী শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম রাস উৎসব কমিটির আয়োজনে শনিবার (১৬ ই নভেম্বর) আশ্রমটির সামনের ঘোষখালী খালে অনুষ্ঠিত হলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মহিলা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বিকাল ৩ টায় এ বাইচ শুরুর পুর্বে সমগ্র এলাকা লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পরার মতো।

বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনটি নৌকা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করে চান্নিরচক এলাকার মিরা রানী সরদারের বংশী নৌকা। তাকে পুরষ্কার হিসেবে একটি ২১ ইন্চি রঙ্গিন টেলিভীষন দেয়া হয়। দিতীয় স্থান অধিকার করেন উত্তর চান্নিরচক এলাকার সন্ধা রানী গলদারের ভাই ভাই দুরন্ত নৌকা। তাকে ১৪ ইন্চি রঙ্গিন টেলিভীষন ও সাতক্ষীরা জেলার চিন্তা রানী সরকারের পঙ্খীরাজ নৌকা তৃতীয় স্থান অধিকার করে, তাকে একটি এন্ড্রাইড মোবাইল ফোন পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয়।

গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছর শুড়িখালী শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম রাস উৎসব কমিটি এই নৌকা বাইচের আয়োজন করে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উপলক্ষ্যে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হলেও খালের দুই তীর সব ধর্ম-বর্ণ ও বয়সের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ নৌকা বাইচ আর রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ থেকে কয়রার আমাদী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে চলছিল নানা কৌতুহল। এ দিনটির প্রহর গুনছিলেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। এলাকার বিভিন্ন স্থানে নৌকা বাইচকে নিয়ে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা।

কয়রার আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আমিরআলী গাইন জানান, গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত সংস্কৃতি এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর এ মৌসুমে নৌকা বাইচ আর রাতের যাত্রাপালা তাদের আনন্দের অন্যতম উৎস। তাই রাস উৎসবের আর নৌকা বাইচের দিনক্ষন ঠিক হওয়ার পর থেকেই এলাকার লোকজন তাদের আত্মীয় স্বজন ও মেয়েদের জামাই বাড়ির লোকদের তাদের এলাকার নিমন্ত্রণ দেন। তাদের এমন নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে আত্মীয় স্বজনরা আগের দিন থেকেই স্থানীয়দের বাড়িতে অবস্থান করেন। রাস উৎসব আর নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতাকে কেন্দ্র করে এই এলাকা পরিনত হয়েছে আত্মীয় স্বজনদের মিলন মেলায়।

নৌকা বাইচ উপভোগ করতে আসা আমাদী এলাকার সুচিত্রা দেবী বলেন, কালের পরিবর্তনে গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মেলাসহ অনেক আর্কষনীয় অনুষ্ঠান হারিয়ে যেতে বসেছে। আজ নৌকা বাইচ কিছুটা হলেও গ্রামীন ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে। জাতী-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষ এই নৌকা বাইচ উপভোগ করছে।

শুড়িখালী শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম রাস উৎসব কমিটির সভাপতি প্রশান্ত কুমার বাইন জানান, প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ উপলক্ষ্যে রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। তিনি মহিলা নৌকার মাঝিদের এই সফলতার জন্য অংশগ্রহণকারী নারীদের পিতা ও স্বামীদের সাধুবাদ জানান।

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ