বগুড়ার শিবগঞ্জে ভাতা কার্ড দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শান্তনা আক্তার সেতু নামে এক নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। শান্তনা উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য।
জানা গেছে, দেউলী ইউনিয়নের সংরক্ষিত সদস্য শান্তনা আক্তার অসহায়, দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে বয়স্ক, বিধবা, পঙ্গু, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও পারিবারিক রেশন কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। তিনি টাকা নিয়ে ভাতা ও কার্ড না করে দিয়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। টাকা চাইতে গেলে নানা টালবাহানা করছেন।
দেউলী ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের ভুক্তভোগী মেহেদুলের এক ভাতিজা জানান, আমার চাচা প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য বিভিন্ন লোকজনের কাছে ঘুরাঘুরি করতো। একদিন শান্তনা মেম্বার আমার চাচাকে বলতিছে, “তুমি তো প্রতিবন্ধী মানুষ! যদি প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে চাও তাহলে ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে আমার কাছে আসো। পরে আমার চাচা ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে একটা অটোভ্যান নিয়ে তার বাড়িতে যায় টাকা দেওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে বাড়ির বাইরে অটোভ্যান রেখে বাড়ির ভেতর গিয়ে শান্তনাকে টাকা দিয়ে বাইরে এসে দেখেন ভ্যানটি আর নাই। এভাবে তিনি তার একমাত্র উপার্জনের সম্বল অটোভ্যানটিও হারান। তারপরও চাচার প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়নি।
কার্ডের কথা বললে তিনি (শান্তনা) বলেন, কার্ড হইছে। কার্ডের টাকা অন্য জায়গায় যায়। শেষ পর্যন্ত না পেলেন কার্ড, না পেলেন অটোভ্যান। এভাবে শান্তনা মেম্বার এই এলাকার বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছেন।
বোয়ালমারী গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী নুরজাহান বেগম জানান, দুই আড়াই বছর আগে আমার স্বামীর বয়স্ক ভাতার জন্য শান্তনাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখনো ভাতা কার্ড করে দেননি। কার্ডের কথা বললে শান্তনা মেম্বার বলেন, কার্ড হবে, হইছে বলে বিভিন্ন কথায় কাটিয়ে দেন।
একই গ্রামের রশিদা বেগম জানান, দেড় বছর আগে শান্তনা মেম্বার আমার মেয়ে বেলেজা খাতুনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি কার্ড করে দেননি। কার্ডের কথা বললে তিনি বলেন যে, আপনাদের কার্ড হইছে। অনলাইন করছি, অনলাইন চেক করেন। পরে আমি অনলাইন চেক করেও দেখি আমার মেয়ের নামে কোনো মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড হয়নি। ১০ থেকে ১২ দিন ঘুরাঘুরির পরেও কার্ড না পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে আর যাইনি তার কাছে।
ভুক্তভোগী চন্দ্রভান বেওয়া জানান, দুই বছর আগে আমার বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন শান্তনা। অনেক কষ্ট করে একটা খাসি বাচ্চা লালন-পালন করেছিলাম। সেই খাসি বিক্রিসহ ধারদেনা করে ১০ হাজার টাকা মিল করে দিয়েছি। একটা পয়সাও কম নেয়নি। তারপরেও আমাক বিধবা ভাতার কার্ড করে দেননি। এখন কার্ডের কথা বললে “হবে হবে” বলে শুধু ঘুরায়।
লতিফা বেওয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা ভুক্তভোগী জানান, আমি একজন অসহায় মানুষ। বহু বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। ঠিকমতো সংসার চলেনা আমার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। একটা ভাতা কার্ড থাকলে অনেক উপকার হতো। তাই একটা ভাতা কার্ডের জন্য শান্তনার কাছে গিয়েছিলাম। কার্ডের জন্য তিনি ১০ হাজার টাকার দাবি করেন। পরে এই অভাবী সংসার থেকে অনেক কষ্ট করে শান্তনাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত কার্ড করে দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। কার্ডের কথা বললে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হইছে। দেশে ঝামেলা হচ্ছে। বিভিন্ন তালবাহানা দেখিয়ে শুধু ঘুরায়। বয়সের ভাড়ে আমি ঠিক মতো হাঁটতে পারি না। গাড়িতে করে অনেকবার তার বাড়িত গিয়ে ঘুরে ঘুরে আসছি। নিজের শরীর নিয়ে আমি ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারি না। তার কাছে গিয়ে আর কতবার হয়রানির শিকার হবো? অতিষ্ঠ হয়ে আর যাই না। এখন আমি কি করবো?
বোয়ালমারী গ্রামের মৃত দবীরের স্ত্রী জানান, আমি বিধবা কার্ড করে নেয়ার জন্য শান্তনাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। দুই আড়াই বছর হয়ে গেলো এখনো কার্ড করে দেয়ার কোনো কথা নাই। যখনই কার্ডের বিষয়ে বলি তখনি বলে যে এই মাসেই হবে। দুই বছর যাবৎ এভাবেই ঘুরাচ্ছে। কার্ডও করে দেয় না, টাকাও ফেরত দেয় না।
ভুক্তভোগীদের ভাতা কার্ড না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শান্তনা মানবকণ্ঠকে মুঠোফোনে জানান, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের সাথে আমার কথা হইছে বলে মুঠোফোন কেটে দেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার মানবকণ্ঠকে জানান, ভাতা কার্ডের জন্য কোনো টাকা লাগে না। টাকা দিয়ে ভাতা কার্ড করে দেওয়ার ক্ষমতা মহিলা মেম্বারের নাই। মানুষেরা টাকা দিলো কেন? কেউ যেন কার্ডের জন্য কাউকে টাকা না দেয়। টাকা দিয়ে কাজ হয় না। আর এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।