ইউসুফ ইউহানা, কলাপাড়া প্রতিনিধি।।
ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে রবিবার (১৩ অক্টোবর) থেকে। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব নদ-নদী ও সাগরে জারি থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিষিদ্ধ এই সময়ের মধ্যে ইলিশ আহরণ ও পরিবহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নদ-নদী ও সাগরে মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নিষেধাজ্ঞা সফল করতে মৎস্য বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপকূলীয় মহিপুর, আলিপুর, কুয়াকাটা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিকেরা, ও জেলেরা। তবে, মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বহু বার দুর্যোগের কবলে পড়ায় এবং মাঝখানে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ আহরণ করতে পারেননি জেলেরা। ফলে মালিক-আড়তদার লোকসানে রয়েছেন।
লোকসানে পড়ে অনেকেই তাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার কথা ভবছেন। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মালিক-আড়তদারকে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্র থেকে পাওয়া, কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩ শত ৫ জন। অবরোধ চলাকালীন সময় এই জেলেদের জন্য বরাদ্ধ মাত্র ২৫কেজি চাল। শীঘ্রই এ চাল যথাযথভাবে জেলেদের মাঝে বন্টন করা হবে। এই নিষেধাজ্ঞা পালনে উপজেলার মৎস্য বন্দর আলিপুর-মহিপুরের ও কুয়াকাটা জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছে ছিল না। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। ফলে পেশা বদলের কথা চিন্তা করছেন কেউ, কেউ। তবে সরকারের এই ২২ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি মাত্র ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ ছাড়া আর কিছুই পাই না বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
অনেক জেলে বলেন,ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও এনজিওর লোন । আর মহাজনের দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। হতাশ হইয়া গেছি। ২২ দিনের অবরোধে মাত্র ২৫ কেজি চাল দিয়ে কতদিন সংসার চলে। অবরোধ এর সময় ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে।
অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের। তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। তারা আরও দাবি করে বলেন, সরকার বছরে দুই বার অবরোধ না দিয়ে বছরে একবার বাংলাদেশ ও ভারতে এক সাথে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেয়া হয়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন,নিষেধাজ্ঞা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ইতিমধ্যে পোষ্টারিং,ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মৎস্য শিকারের নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় সাগরে বেড়েছে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ। অবরোধ সফল করতে জেলেদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ চলছে ধারাবাহিক গনসংযোগ। সমুদ্রসহ স্থলভাগে সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।