31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪

রামগতিতে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন আ-লীগে অনুপ্রবেশকারী- হতে চান সভাপতি

এম.শাহরিয়ার কামালঃ
জেল জুলুম নির্যাতন গুলিবিদ্ধ দেহ রক্ষীবাহিনীর নির্মমতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
হাজারো রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজ ক্ষমতার মসনদে, উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়ে চলার আরেক নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বিগত এক যুগের শাসনামল দেশের উন্নয়ন সুশাসনে আওয়ামী লীগ দলটি জাতির প্রত্যাশা পূরনে সফলতার সাক্ষর রাখার পাশাপাশি দলকে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে প্রকৃত আওয়ামীলীগারদের মুল্যায়ন করার কার্যক্রম চলমান রেখেছে।

এদিকে রামগতি উপজেলাধিন চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড ও দলবাজি করার বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য বিকল্পধারার
মহাসচিব মেজর(অবঃ)আব্দুল মান্নান(এমপি)’র ভাই পরিচয় দিয়ে এলাকায় ভিন্ন রাজত্ব্য কায়েম করার বিষয়টি এখানকার জনমনে ওপেন সিক্রেট বলেও জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক একাধিক বেক্তি জানান,২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বি এন পি’র পক্ষে জোড়ালো সমর্থন দিয়ে ধানের শীষ মার্কায় ভোট করেন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। পরে নির্বাচিত সাংসদ আশ্রাফ উদ্দিন নিজান (এমপি)’র আর্শিবাদপুষ্ট হয়ে এলাকায় বি এনপি নেতা পরিচয় দিয়ে ব্যাপক শুবিদা গ্রহন করেন তিনি।

পরবর্তী ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থী মেজর (অবঃ)আব্দুল মান্নান কুলা মার্কা প্রতীক নিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করেন। এতে করে “মুহুর্তেই গণেশ উল্টে যায়”
চেয়ারম্যান নুরুল আমিন যোগদেন বিকল্পধারায়,কুলার পক্ষে ব্যাপক গনসংযোগ করে
কৌশলে রামগতি থানা বিকল্পধারার যুগ্ন আহবায়ক পদটি লুপে নেন ।
আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের ইতিহাস সেনা সমর্থিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত নেতা সিএসপি আব্দুর রব চৌধুরীর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে নানান উশ্কানিমুলক মিথ্যাচার করে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে হাড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।

স্থানীয়দের মাঝে বোভা প্রশ্ন,নুরুল আমিন আওয়ামী লীগ হলেন কবে?আসলেই কি তিনি আওয়ামীলীগ নাকি ছদ্ধবেশী?
তাহলে কিভাবে আসলেন আওয়ামী লীগে?
রাজনৈতিক দোকানে ক্রেতা হিসেবে অত্যন্ত চতুর ও ধুরন্দর এই চেয়ারম্যান ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে রামগতি-কমলনগর আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী না থাকায় কৌশলে অনুপ্রবেশ করেন আওয়ামী লীগে।
জৈনক এক রাজনৈতিক নেতার মতো সকালে এক বিকেলে আরেক!এমন ডুয়েল অভিনেতা হিসেবে নৌকার পক্ষে নানান নাটকীয়তার জন্ম দেন তিনি।
এরপর সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের হাতে বায়াত গ্রহন করে সত্যিকারে আওয়ামীলীগ করার অঙ্গিকার করেন।
নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিলেও মুলত তিনি এখনো পর্যন্ত নিজ ওয়ার্ড সদস্য পদটিও গ্রহন করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের কোন পোষ্ট বহন করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি রামগতি উপজেলা আ-লীগের সদস্য, এছাড়া পোড়াগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ও সদস্য।
খোজ নিয়ে জানা যায়,সর্বশেষ গত ২৪/২/২০১৩ ইং তারিখে রামগতি উপজেলা আ-লীগের সভাপতি- সাধারন সম্পাদক সাক্ষরিত চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন আ-লীগের ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঐ কমিটিতে নেই চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।
চেয়ারম্যান নুরুল আমিন উপজেলা আ-লীগের সদস্য আছেন কি না জানতে চেয়ে রামগতি উপজেলা আ-লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ বরাবর ফোন করা হলে জাগো লক্ষ্মীপুর জানান, চেয়ারম্যান নুরুল আমিন আওয়ামী লীগের কোন পদেই নেই।

এদিকে ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা
নৌকাকে তৃনমূলের ঘরে ঘরে পৌছে দিতে উদ্যোগ নিলে সুযোগটি কাজে লাগান হাইব্রিড এই চেয়ারম্যান। দৌড়ঝাপ লবিং আর অর্থের দাপটে নৌকার নমিনেশন কব্জায় নিয়ে জনসমর্থনহীন ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। নিজেকে আ-লীগের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান দাবী করে

ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধা সমূহ সুষম বন্টন না করে নিজেই হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। নৌকার জনপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়া এই চেয়ারম্যান মুখে আওয়ামী লীগের গান গাইলেও মুলত তিনি অনুপ্রবেশকারী, যার জলন্ত প্রমান গেল জাতীয় নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থীর পক্ষে জোড়ালো সমর্থন দেওয়া। যার হাতে হাত রেখে চিরদিন নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গিকার করলেন পরবর্তী ঐ নেতার সাথে বেঈমানি করতে একটুখানি বিবেকে বাধেনি
তার। বরং গোপনে বিকল্পধারার প্রার্থীর নমিনেশন প্রাপ্তির পক্ষে নীল নকশা তৈরী করার মহাউৎসব করেছেন তিনি। যেমনটি রাশিয়ার সরাট জার নিকোলাসের সাথে বেঈমানি করেছিল তার ঘনিষ্ট এক সহচর ঠিক তেমনটাই করলেন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।
একাধিক সুত্র জাগো লক্ষ্মীপুরকে জানিয়েছেন, সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুন এমপির হাত ধরেই নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।অথচ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থীর মনোনয়ন প্রসঙ্গে পূর্বের থেকেই গোপনে গোপনে সমর্থন ছিল তার।
পরবর্তীকালে এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ)আব্দুল মান্নান (এমপি)’র পক্ষে মড়িয়া হয়ে কাজ করাটাই তার বাস্তব উদাহারন।
একাধিক মহলের মতে মুলত অর্থের ধান্দা আর রাজনৈতিক শুবিদা হাসিল করার হীন উদ্দেশ্যেই চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের আ-লীগে যোগদান করা।যা ছিল স্বার্থ চরিত্রার্থ আর আই ওয়াস মাত্র।
অথচ আওয়ামী লীগ দল নামটি ধারন করেই রাজপথে টিকে আছে সগৌরবে।কিন্তু নৌকার জন্য তার অবদান জিরো জিরো জিরো।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে একাধিক রাজনৈতিক দায়ীত্বশীল নেতা জানান,মুখে আওয়ামী লীগ আর অন্তরে বিকল্পধারা এমন একজন লোক ইউনিয়ন আ-লীগের সভাপতি হয় কিভাবে? কয়েকদিন হয় আ-লীগে অনুপ্রবেশ করেছে সে-ইবা আবার কিভাবে সভাপতি হওয়ার জন্য প্রার্থী হয়?
তবে কি আওয়ামী লীগে থেকে আ-লীগের শুবিদা ভোগ করে ভবিষৎতের জন্য বিকল্পধারাকে এ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এতটা পরিকল্পনা?
রাজনৈতিক বিশ্লেশক মহলের মতে,চলমান শুদ্ধি অভিযান পরিপূর্ণ ভাবে
সফল করতে হলে হাইব্রিড-
দলবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের যে কোন মুল্যে ঠেকাতে হবে।

মনে রাখতে হবে শুদ্ধিয়াভিযান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঘোষনা, কাজেই ত্যাগি ও প্রকৃতদের নিয়েই কমিটি ঘোষনা করা উচিত।তবেই দল এবং নেত্রীর প্রতি আস্থার প্রতিফলন ঘটবে বলে গুরুত্বারোপ করেন তারা।+

চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সম্পর্কে জানতে এলাকায় অনুশন্ধানকালে একাধিক লোকজন জানান,চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই মুলত লুটপাট শুরু করেছেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি আর এলাকায় দখলবাজিতে মেতে উঠার পাশাপাশি
ক্ষমতার দাপট আর বিভিন্নভাবে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে পোড়াগাছা ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন নিয়মিত।

গত কয়েক বছর ধরে চেয়ারম্যানের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েও মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়দের অনেকে।
তবে সম্প্রতিক সময়ে চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনিয়ম-দূর্ণীতির হাল চিত্র তুলে ধরে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদন সূত্র মতে জানা যায়, পোড়াগাছা ইউনিয়নের আজাদনগর ষ্টিল ব্রিজ সংলগ্ন সরকারি যায়গা দখল করে অন্তত ২০টি দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন চেয়ারম্যান নিজেই।এছাড়া প্রতিটি দোকান পজিশন ৫০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন উল্লেখ করে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে তুলে ধরা হয় স্থানীয়দের অভিযোগের পেক্ষিতে অবৈদ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশ প্রধান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)। তবে আদেশ অমান্য করে ক্ষমতাধর ঐ চেয়ারম্যান অবৈদ স্থাপনা না ভেঙ্গে উল্টো এখনো বহাল তবিয়তে দোকানগুলোর সুযোগ-সুবিদা ভোগ করায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সরকার কর্তৃক বিনামুল্যে বিতরনকৃত পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগে গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন বলে চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন তুলে ধরেন স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করিনি বরং ছাত্র জীবন থেকেই আমি ছাত্রলীগ পরবর্তী যুবলীগ হয়ে আওয়ামী লীগ করছি, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে বিকল্পধারার বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে বলেন,বর্তমান সংসদ সদস্য আমার “ভাই” পারিবারিক আত্বীয় হিসেবে আমি তার দল করাটা দোশের কিছু নয়।আপনার কেমন ভাই হন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা পারিবারিক আত্বীয়। তবে কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে তিনি জড়িত নন বলে সাফ জানিয়েছেন।

(চোঁখ রাখুন পরবর্তী পর্বে)

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ