আজ (২৭ জুন) উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ, নজরুল গবেষক ও স্বরলিপিকার সুধীন দাশ’র মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলাদেশে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে যাঁরা বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি তাঁদের একজন। সঙ্গীতের প্রতিটি শাখায় তিনি সদর্পে বিচরণ করে নিজেকে সঙ্গীতের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বাংলা গানকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসীম। তাঁর বিশেষত্ব হচ্ছে নজরুল সঙ্গীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুর অনুসারে স্বরলিপি গ্রন্থ লেখা।
সুধীন দাশ ১৯৩০ সালের ৩০ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের তালপুকুরের বাগিচাগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমাংগিনী দাশ।
সুধীন দাশ ১৯৫৫ সালে নীলিমা দাশকে বিয়ে করেন। তাঁর ছেলে নিলয় দাশ এবং মেয়ে সুপর্ণা দাশ দুজনেই সঙ্গীতশিল্পী। ২০০৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাঁর ছেলে। তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী অলকা দাশ এবং নজরুল সংগীত শিল্পী মানস কুমার দাশের কাকা।
ছোটবেলা থেকেই তিনি বাউন্ডুলে ধাঁচের ছিলেন সুধীন দাশ। তবে পড়াশোনায় বরাবরই ভালো করতেন। তাঁর হাতেখড়ি হয় বামচন্দ্র পাঠশালায়। তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে তিনি ঈশ্বর পাঠশালায় ভর্তি হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে সেই পাঠাশালাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে।
বড় ভাই সুরেন্দ্র নারায়ণ দাশ ওরফে সুরেন দাশ সংগীতের শিক্ষক ছিলেন। সুরেন দাশের কাছ থেকেই তিনি সংগীতের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ পরীক্ষার সময় তিনি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েন সংগীতে।
১৯৪৮ সালে বেতারে নিয়মিতভাবে নজরুল সংগীত গাইতে শুরু করেন সুধীন দাশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি মনোনিবেশ করলেন নজরুল সংগীতের শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়নে। আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে সেই স্বরলিপি উদ্ধারের কাজে তাঁকে সহায়তা করেন স্ত্রী সংগীতশিল্পী নীলিমা দাশ।
১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে ২৫টি স্বরলিপি নিয়ে নজরুল সুরলিপির প্রথম খণ্ডটি প্রকাশ করে নজরুল একাডেমি। পরে নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় আরও ৩৩টি খণ্ড।
সুধীন দাশ এ পর্যন্ত নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে ১৬টি ও নজরুল একাডেমি থেকে ৫টিসহ মোট ২১টি খণ্ডে নজরুলের গানের স্বরলিপি গ্রন্থ বের করেছেন। লালনগীতির ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান সর্বজনস্বীকৃত। তিনিই প্রথম লালনগীতির স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
সুধীন দাশ সঙ্গীতক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৮৮ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা’ ও ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা’, নজরুল স্বর্ণ পদক
নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক, জেবুন্নেছা-মাহবুবুল্লাহ ট্রাস্ট স্বর্ণ পদক এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক।
সুধীন দাশ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০১৭ সালের ২৭ জুন অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।