31 C
Dhaka
বুধবার, মে ৮, ২০২৪

নাকফুল / রানা মুন্সি

শুনলাম জেঠাতো ভাইয়ের বিয়ে। আজ নাকি নাক ফুল পড়াতে যাবে কনের বাসায়। অতি গোপন এবং বিশ্বস্ত সুত্রে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম হ্যাঁ আজ-ই। গভীর ভাবে ভেবে দেখলাম এই যায়গায় যাওন মিস করা যাইবো না। তাই সকাল থেকে নানা ছলে বলে কৌশলে ভাইয়ের ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছি যাতে মুখ ফস্কে বলে ফেলে “রানা রেডি থাকি যাওয়া লাগবে “। ঘটনা সুবিধার না দেখে বিরবির করতে করতে বাসায় গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিই। আমার আবার মন খারাপ হলেই ঘুম পায়। হটাৎ ফোন বেজে ওঠায় ঘুম ভাঙ্গে। দেখি জেঠাতো ভাই ফোন দিচ্ছে রিসিভ করেই চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। কল কেটে বিছানায় নাগিন ডান্স দিতে মন চাইছিল। ভাগ্যিস খাটের কন্ডিশন ভ্লা না। যাহোক উঠে ফ্রেশ হয়ে আন্ডার-মান্ডার সমেত পোষাক পড়ে বের হলাম। উদ্দেশ্য নাক ফুল পড়াতে যাবো। অটো ভাড়া করা হয়েছে আসলেই যাবো। হর্নের আওয়াজ শুনে ফিরে দেখি অটো আসতেছে অপরাধী গান বাজাতে বাজাতে। কাছে আসতেই কানের নিচে একটা লাগিয়ে দিলবার দিলবার গান বাজানোর কথা বল্লাম সাথে ফোন গুতাগুতির সুবিধা হবে ভেবে অটোর পিছনের সীট পাহারা দিতে শুরু করলাম। আচমকা এক দুলাভাই এসে সেই সীট দখল করে নিল। অসুস্থতার অজুহাত ও একটা স্পিড খাওয়ানোর কথা বলে ওনাকে সামনে পাঠালাম কিন্তু কথায় আছে, ” কপালের লিখন যায়না খন্ডন” কো’থেক জানি জেঠা এসে আমাকে পিছনের সীটে বসতে দেখে কাছে ডাকলেন (বলে রাখা ভাল তিনি মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে এটা সেটা আনতে বলেন) তাই নির্ভয়ে গেলাম। বল্লেন পিছনের সীটে মহিলা মানুষ যাবে, তুই সামনে বস। বল্লাম আমি অসুস্থ ডাক্তার সামনে বসতে নিষেধ করছে।সাথে সাথেই কি ঘটলো জানি না হটাৎ একটা শব্দ কানে আসলো আর চোখে সরষে ফুল ছাড়া কিছুই দেখতে পেলামনা। জ্ঞান ফেরার পর দেখি অটোতে চড়ে কোথাও যাচ্ছি কিন্তু কোথায় যাচ্ছি মনে করতে পারছিনা। তখনো মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই তেঁতুলতলা বাজারে পৌঁছে পান খাওয়ার ইচ্ছে হলে সাথের দুলাভাইকে বল্লাম। দুলাভাইসহ নেমে পানের দোকানে গেলাম। তখনই দুলাভাই গলা ভেজানোর কথা বলে পাশের হোটেলে গিয়ে গুরুর মাংস খিচুড়ির কথা বল্লেন শুনে মনটা ভরে গেলো। খাবার সামনে আসলে দুজনেই কানাবগির ছা’র মতো গাপুসগুপুস শুরু করলাম। খাওন-দাওনের ব্যপারে আমার কোনো আক্ষেপ, উৎকন্ঠা, অনুযোগ নেই। খাওনের ফাঁকে দুলাভাই কখন উঠে বেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। খাওন শেষে বের হতে গিয়ে জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো যখন কানে পড়লো ৩২০/=। মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পর শয়তানী হাসি হাসতে হাসতে দুলাভাই এর দেখা। একটা বিষয় ক্লিয়ার হাইকোর্ট করলেও ম্যানেজার বাইর হতে দিবে না। টাকাটা দিয়ে পানের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে বের হলাম। বিষন্ন মনে গাড়ির দিকে আগালাম। তবে মনে একটাই প্রফুল্লতা পৌছা মাত্রই দু’চার খানা চাঁদ মুখ দেখলেই সব উসুল করান যাইবো। আর যদি দু’একটা চক্করে ফেলাইতে পারি তবে তো ষোলো কলাই পূর্ন। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে পরিচিত একটা(গার্লফ্রেন্ড এর) পারফিউমের গন্ধে মনটা চাঙ্গা হয়ে গেলো। আমি এই পারফিউম পছন্দ করি তা হয়তো কোনো ভাগ্যবতী জানতো। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গাড়ি থেকে নেমে কনের বাড়ির দিকে আগাচ্ছি এমন সময় পিছন থেকে চেনা কন্ঠে ভাইয়া বলে ডাক ফিরেই দেখি বিল্টু (গার্লফ্রেন্ড এর ছোট ভাই)। পারফিউমের আন্দাজটা ভুল ছিলো না। বিল্টুকে কান মলা দিতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো হাতে একটা ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে বল্লাম তুই এখানে কী করিস শালা বদমাশ। তেত্রিশ পাটি দন্ত বের করে বল্ল তিতলী (আমার গার্লফ্রেন্ড এর নাম) আপুর সাথে আসছি। এটা শোনার পর ইচ্ছে হচ্ছিল ডিরেক্ট উগান্ডা যামু কেয়ামতের আগে এই দেশে আসমু না। হালার ওইডাও সম্ভব না আবেগে কইলাম আরকি। তো বল কি বলবি। শালায় কইলো আপু পিছনের লাউয়ের মাঁচার নিচে আছে তোমাকে ডাকলো। বিশ্বাস করেন এটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে টোটালি ইনোসেন্ট মার্কা গম্ভীরমুখে চুপিচুপি হাজির হলাম। যাতে তিতলী ভাবে এখানে আমাকে জোরকরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমাকে দেখেই ধমকের গলায় বল্লো শুভ কাজে এসে এমন মুখভার করে থাকলে চলবে, হইছে আর নাটক করার দরকার নাই সব জানা আছে। নত মস্তকে কোমল স্বরে বল্লাম কি জানো বাবু? কটমট রেগে চোখ পাকিয়ে বল্লো, একদম চুপ কোনো কথা হবে না ঐ ঝাউগাছটার আড়ালে চলো তো কথা আছে। মুখফুটে কইলাম, অফ মুডে আছি কিস মিস করতে পাবো না আর আড়ালেও যাবো না এখানেই বলো না জানু? মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লাম, না ঠিক আছে চল। আড়ালে গিয়ে মনে মনে কইলাম, পরিবেশ টা সুন্দর না কোনো হৈচৈ আছে! তিতলী বোধহয় মনের কথাটা বুঝতে পেরে কইল এখানে তোমাকে ঢেলে দেওয়ার জন্য ডাকিনি যা বলছি মন দিয়ে শুনবা ঠিকাছে। ওকে শুনবো তার আগে অনুমতি দিলে একটা কথা বলি। হ্যাঁ বলো। আচ্ছা আমার হবু ভাবি তোমার কে হয়? কে আবার আমার বান্ধবীর বড়ো বোন। তুমি কী জানতে যে আমি আসবো? হ্যাঁ জেনে শুনেই আসছি, নইলে আমি-ই আসতাম না। ভালো, তা তুমি কি জানি বলতে চাইলে? হ্যাঁ শোন-
সোজা কনের বাড়ি গিয়ে মাঝের রুমের কোনার চেয়ার টায় বসবে। আচ্ছা যাই।এ-ই এখনো শেষ হয়নি। বলো বলো। ওখানেই বসবা তাহলে রান্না ঘর থেকে আমি দেখতে পাবো। যেচে কারো সাথে কথা বলতে পাবা না মেয়ে তো অবশ্যই না। আচ্ছা। পাঞ্জাবির হাতা ওভাবে গুটিয়ে রাখছো কেনো? ছেড়ে দাও; আর টুপি কই? পকেটে। বের করে পরে নাও। আর তোমার ফোন একদম বন্ধ করে রাখবা কেউ যেন জানতে না পারে তুমি অপো ফোন চালাও। আচ্ছা। রত্না আর রেশমী নামে দুইটা লম্বা মেয়ে আছে ভুলেও কাছে যাবনা। আচ্ছা। ঈশিতা আর রুমকির কাছেও না। আচ্ছা। আর সাদিয়ার দিকে তাকালে চোখ তুলে নেব। টয়লেটেও যাবানা যা এক-দুই এখানেই সেরে নাও। ওকে। জিপার খুলছো কেন? আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম এক করবো। আরে আরে এখানে কেন একটু দূরে যাও, মাথাটা গেছে না-কি? কাজ শেষে বল্লাম আরকিছু বলবা। না যাও।আমি একটা কথা বলি? কী? তোমার কাছে বিশ টাকা হবে? কেন? বাড়ি যাবো অটো ভাড়া দিতাম। কেন অনুষ্ঠানে থাকবা না? আর অনুষ্ঠান! থাকলে দাও নয়তো আমি হেটেই যাবো। এই নাও বলে একটা একশো টাকার নোট হতে ধরিয়ে দিয়ে চকাম করে একটা চুমু দিল আমিও পরপর ক’টা দিয়ে যে-ই কামর বসালাম ওমনি চিৎকার করে উঠলাম।
সাথে সাথেই ঘুম, স্বপ্ন দুটোই ভেঙে খান খান। তবে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এইটা ভেবে যে এই চড়-আঘাত আর ৩২০ বাস্তব না। স্বপ্নই ছিলো।

লেখক পরিচিতিঃ
আব্দুর রব রানা মুন্সি
শিক্ষক, কবি ও রম্যলেখক।
উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ