31 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

গরুর ভুঁড়ি;প্রিয়ন্তি মুনা

♦আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছঁড়ানোর সময়, হঠাৎ আম্মু পিছনে থেকে এসে কানের কাছে বললো, সোনা মেয়ে আমার ! লক্ষী মেয়ে আমার !

– আম্মু কি হয়েছে ?

আম্মু আবার কোনো কাজে আমাকে দরকার হলে সোনা,লক্ষী মেয়ে বলে ডাকে।

– আজ নুরী আসবে না,ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো ! (নুরী আমাদের বাসায় কাজ করে।)

– তাহলে আমি এখনই ঝাড়ু দিয়ে দিচ্ছি,,,

– না তোকে ঝাড়ু দিতে হবে না, সোনা মেয়েটা আমাকে অন্য কাজে সাহায্য করবি আজ। আম্মুর কথা শুনে ভাবতে লাগলাম, এমন কি কাজ আমাকে দিয়ে আজ করাতে চাইছে !

– শোন গরুর ভুঁড়ি পরিস্কার করে রেখেছিলাম কিন্তু ছোট ছোট টুকরো করা হয়নি। আরেকটু পরিস্কার করে দিবো আর তুই কাটবি।

আম্মুর কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি। জীবনে খাওয়া ছাড়া ওই গরুর ভুঁড়ির সামনেও যাইনি। আর আজ কিনা সরাসরি কাটার নির্দেশ দিলো,,,,?

– আম্মু আমি গন্ধই তো সহ্য করতে পারি না আর ধরতেও ঘৃণা করে। কিন্তু আমি চেষ্টা করতে পারি যদি তুমি আমার একটা কথা শোনো ।

– কি কথা ?

এবার আম্মুকে জরিয়ে ধরে বললাম, আম্মু সেদিন না প্রাইডের শো রুমে একটা সুতি শাড়ি দেখেছি। সাদা শাড়িতে নীল আর কমলা রঙের কম্বিনেশন। দারুণ দেখতে আর দামও বেশি না। মাত্র বারোশো টাকা। তুমি বারোশো টাকা দাও না লক্ষী আম্মু ! তাহলে আমি এখনই গরুর ভুঁড়ি পরিস্কার করে দিবো !

– গরুর ভুড়িঁ কাটার ঘুস চাস নাকি রে তুই,,,? নুরী থাকলে তো তোকে জীবনেও ডাকতাম না।

– আম্মু প্লিজ দাও না টাকাটা। আমার লক্ষী সোনা আম্মু। আমার ভালো আম্মু। মেয়েকে দিবা না তো কাকে দিবা, ছেলের বউকে,,,,?

-ছেলের বউ পাইলি কই তুই,,,,? ঠিক আছে দিবো। এখন আসো আগে কাটাকাটি করে দাও তারপর দেখি !

ড্রয়ার থেকে মাস্ক বের করে মুখে লাগালাম। তারপর ওড়নাও মুখে পেঁচিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে গরুর ভুঁড়ি কাটার মিশনে নামলাম। হাত দিয়ে ধরতেই কেমন জানি গা শিউরে উঠছিলো। কোনো মতে কেটেকুটে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোঁয়ার পরও দেখি গন্ধ যায় না। গোসলের সময় আধাঘন্টা হাত শ্যাম্পু পানিতে হাত ভিজিয়ে রেখেও মনে হয় কাজ হয়নি। কেমন জানি হাত থেকে গন্ধ পাচ্ছিলাম।

দুপুরে খাওয়ার সময় আম্মুকে ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে তার হাতে খেলাম। ছোট ভাই আমার কান্ড দেখে দাঁত খিচিয়ে হাসে। সন্ধ্যার পর আব্বু বাসায় আসলে কাছে যেয়ে বলি, আব্বু আজ আমি প্রথমবার গরুর ভুঁড়ি কাটছি তাই তোমাকে নান আর শিক কাবাব খাওয়াবো। তাড়াতাড়ি রেডি হও, ১০ নম্বর হোটেল রাব্বানিতে যাবো । আব্বু তো আমার কথা শুনে টাস্কি খাইছে !

– আমার মেয়ে আজ গরুর ভুঁড়ি কাটছে আর সেজন্য আমাকে খাওয়াবে ? বাহ্ তাহলে তো খেতেই হবে !

হোটেলে বসে খাওয়া শেষ করে বিল আসতেই আব্বু চট করে আমার হাতে এক হাজার টাকার নোট গুঁজে দেয়। আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি আর আব্বু মুচকি হাসছে। আম্মু ব্যাপারটা টেরও পায়নি। বুঝলাম হয়তো বাবারা মেয়েদেরকে একটু বেশিই ভালোবাসে।

– নিয়ন লাইটের আলোতে পাশাপাশি দুটি রিকশা ছুটছে। দিনটা খারাপ যায়নি ভেবে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, আবার কবে গরুর ভুঁড়ি কাটাবা আমাকে দিয়ে,,,,?

– বারোশো টাকা ঘুস দিয়ে আর ভুঁড়ি কাটাতে চাই না । তার থেকে আর গরুর ভুঁড়িই খাবো না কোনোদিন। পাশের রিকশা থেকে আব্বু বলে উঠলো, বারোশো না বাইশ টাকা গরুর ভুঁড়ির জন্য গেছে,,,,

আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি….
(বাবা-মার কাছে থেকে ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছি আজকে)

♦এস এন খান রানা/বিশেষ প্রতিবেদন

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ