31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪

নওগাঁর আত্রাইয়ে শতবর্ষী কদমতলার বটগাছটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে

ওমর ফারুক, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ-নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের পূর্ব পার্শ্বে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের এ বটগাছটি। রাস্তার দুই পাশে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটির বিশাল শাখা-প্রশাখা।

শিকর-বাকরে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। শতবর্শী এ বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজা তরুণ আর চিরসবুজ। যেন বার্ধক্যের ছাপ লাগেনি তার গায়ে। আর সে কারণেই এ বটগাছকে ঘিরে নানা রহস্যে ঘেরা গল্প-কাহিনী আর কল্পগাথা।

কী শোভা, কি ছায়া গো, কি স্নেহ, কি মায়াগো, কি আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর ক’লে ক’লে। বিশ্বকবি রবিঠাকুর রচিত আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের এ চরণে গ্রাম বাংলার অপরুপ শোভা, ছায়া-মায়া ও স্নেহের আঁচল বিছানো স্থান যেন আমাদের বটবৃক্ষের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

তথ্য অনুসন্ধানে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শের শাহ্ বাদশার আমলে গ্রান্ডটাংক রোড নির্মান কালে আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম সংলগ্নে এ বটগাছটি রোপন করা হয়েছিল। যার বয়স এখন শত বছর পেরিয়ে গেছে। এ বট বৃক্ষের গা ঘেসে একটি কদম গাছের জন্ম হয়। আর সে কারনেই এ জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছিল কদমতলা।

এখন সে কদম গাছটি আর নেই কিন্ত কালের আবর্তে যুগ যুগ ধরে আজও তার স্মৃতিটুকু রয়ে গেছে। শের শাহ্ বাদশার আমলে এ এলাকা বিল অঞ্চল ছিল। রোদ বৃষ্টির মাঝে কৃষাণ-কৃষাণী তাদের কষ্টের ফসল ফলাতো। রাখালেরা দিগন্তজুড়া মাঠে ঘাস খাওয়ানোর জন্য গবাদিপশুকে ছেড়ে দিয়ে কান্ত শরিরে শীতল ছায়ার প্রতিক্ষায় থাকতো। আর সে কারণেই এই বটবৃক্ষ রোপন করা হয়েছিলো বলে জানা যায়। তাই গ্রীষ্মের তাপদাহে কৃষক যখন অতিষ্ট ঠিক তখনই একটু শীতল ছায়ার আশায় এ বট বৃক্ষের নীচে জমা হতো।

এ বটবৃক্ষ সম্পর্কে আলাপচারিতায় ভবানীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, আমার জন্মের পর থেকেই এ বটগাছটি দেখে আসছি । এই বটগাছের কত বয়স হবে তা আমরা সঠিক ভাবে বলতে পারবো না। বর্তমানে বটগাছের নিচে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সমাগম ঘটে। এ বটগাছটি যেন সেই আদিম সনাতন সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যর সারকথা আজও সবার সামনে তুলে ধরে আছে।

এদিকে অযত্নে-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছের অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বট গাছটি দেখতে আসে লোকজন বছরের প্রায় প্রতিদিন। তাদের জন্য বিশ্রাম বা বসার জায়গাটুকু ও এখানে নেই।

তবে বিশ্বায়নের যুগে ডিজিটাল দেশ গঠনের পাশাপাশি কান্ত কৃষাণের প্রাণ জুড়ানো সবুজ প্রকৃতির বটের ছায়ার কোন বিকল্প নেই। তাই ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রতিবছর বৃক্ষরোপন সপ্তাহ উদযাপন কালে আমাদের বটের চারা রোপন করা উচিত।

এলাকার সচেতন মহল মনে করেন এই বট বৃক্ষটি সংরক্ষন এবং এই স্থানটিতে দর্শনার্থীদের বসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখানে আরো লোকের সমাগম ঘটবে এবং ভবিষ্যতে এ বটবৃক্ষ পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হবে। এলাকাবাসীর দাবী এই ঐহিত্যবাহি বটগাছটি রক্ষায় যেন প্রশাসনের সু-দৃষ্টি পড়ে এবং তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করেন।

সাংবাদিক ওমর ফারুক
দৈনিক ভিন্ন বার্তা
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
০১৭৩৯৫৭১২২৫,তারিখ-২৬/১০/২০১৯/ইং।

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ