31 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

লোভ-লালসা মুক্ত হোক ছাত্রজীবন

সাইফুল ইসলাম হাফিজ

“লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু ” এই চির সত্য কথাটা আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু এর মর্মার্থ অনুধাবন করে কয়জনে জীবনকে সাজাতে পারি? খুবই অল্প কয়েকজন। কিন্তু বেশিরভাগ লোক কেন পারে না? কারণ, তারা তরুণ বয়সে, ছাত্রজীবনে যে অভ্যাস গড়ে তুলেছে, কর্মজীবনে সে অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারছে না। ছাত্রজীবন হল শেখার জীবন, চরিত্র গঠন করার উপযুক্ত সময়। কিন্তু এই জীবনেই যদি আমরা লোভ-লালসার ফাঁদে পড়ে জীবনকে নষ্ট করে ফেলি তবে প্রত্যাশিত সমাজকে আমরা কী দিব? আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে? ইদানীং একটা চিত্র বারবার চোখে পড়ছে, কোন নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা কয়েকজন শিক্ষার্থীর ছবি একাধিক কোচিং সেন্টারের পোস্টারে, ব্যানারে, লিফলেটে দৃশ্যমান। ছবি, নাম ছাপা হওয়ার পর তারা বেশ আহ্লাদিত, আবেগাপ্লুত হয়। অনেকে আবার লিখিত প্রমাণ, মৌখিক সাক্ষাৎকারও দিয়ে থাকে। মনে প্রশ্ন জাগে যে এই ভাই/ আপু কয়টা কোচিং-এ ক্লাস করছিল? ভাল ফলাফল করার পর ফুলের তোড়া, ল্যাপটপ, টাকার খামসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী সামনে আসলে তারা তাদের আবেগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিক্রি করে দেয় নিজের চরিত্রকে। ক্যামেরা সামনে এলে নীতি-নৈতিকতার কথা আর মস্তিষ্কে উদয় হয় না। যার ফলে তিনি উচ্চ শিক্ষা জীবনে পদার্পণ করে একটি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে। নিজের অজান্তে উচ্চশিক্ষা জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই দুর্নীতির ছোটো-খাটো একটা শিক্ষা পেয়ে যায়। আপনি যখন লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে কাউকে বলেন যে আমি এই কোচিং থেকে চান্স পেয়েছি, ঐ কোচিং থেকে চান্স পেয়েছি তখন কিন্তু ভূয়োদর্শী লোকজন আপনাকে পরিমাপ করে ফেলে। যার ফলে তাদের নিকট আপনার ব্যক্তিত্ব, মেধা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। আর ধিক্কার, ও নিন্দা তাদের প্রতি যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে, নিজেদের কোচিং বাণিজ্যের প্রচারের জন্য ব্যবহার করে এই কচি মেধাগুলোকে। অবলীলায় নষ্ট করে দেয় এই দেশ সেরা তীক্ষ্ণ প্রতিভার অধিকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে। তারা শিক্ষিত ঠিকই কিন্তু শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অর্জনে তারা অকৃতকার্য। ন্যূনতম মূল্যবোধ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। প্রতিপক্ষের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার বেপরোয়া নেশায় তারা উন্মাদ। যার বলি হয় দেশ সেরা প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ, প্রকাণ্ড অঙ্গনে শিক্ষার্থীদের মুক্ত যাত্রা ব্যাহত হয়। তাই ছাত্রজীবন থেকেই আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে যে আমাদেরকে কেউ যেন স্বার্থের জন্য ব্যবহার না করতে পারে। আমরা যেন টাকার কাছে আমাদের মেধা, সততা বিক্রি করে না দিই। এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আরেকটা বিষয় বলা দরকার। বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করে যথাযথ শিক্ষার্থীকে এই অর্থ বৃত্তি প্রদান করার। কিন্তু দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে কতিপয় শিক্ষার্থী আছে, যারা পাওয়ার যোগ্য নয় কিংবা তাদের এই অর্থ বৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। তাদের অবিভাবকগণ তাদের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেওয়া সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঁচকলা দেখিয়ে গরীব শিক্ষার্থীদের অর্থে ভাগ বসায়। ছাত্রজীবনে এই সামান্য-কিছু টাকার সামনে যদি আপনার লোভ সামলাতে না পারেন- তবে কর্মজীবনে আপনার পেশায় কতটুকু সৎ, নিষ্ঠাবান থাকবেন সেই প্রশ্নটা একবার নিজের কাছে করে দেখুন। তাই চরিত্র গঠন করার এই সোনালী সময়ে আমাদের উচিৎ হবে নিজের চরিত্রকেও সোনালী রঙে গড়ার। পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের চরিত্রকে লোভ-লালসার ভয়াল গ্রাস এবং যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে। তাই আমারা যদি লোভ-লালসা মুক্ত হয়ে, নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে ছাত্রজীবন শেষ করে কর্ম জীবনে পদার্পণ করি তবে ভবিষ্যতে জাতি আমাদের অফিসের ডেস্কের মধ্যে দেখবে না অবৈধ টাকার বান্ডিল, আমাদের হাতের কলম চলবে না আর উল্টো দিকে। আমারাই গড়তে পারব দুর্নীতিমুক্ত একটি আলোকিত সমাজ।

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ