বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ টানা ৩য় বার অর্থাৎ ১৫ বছরের দীর্ঘ মেয়াদের সরকার গঠন করল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রাচীন চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন তেমনি তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও দেশীয় চিকিৎসাকে প্রাধান্য দেন। তিনি গত ৩ বারের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বের সাথে দেশীয় চিকিৎসা তথা ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রচার, প্রসার ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এমনকি তিনি নিজেও গাছ-গাছড়ার ঔষধ গ্রহন করেন। তার এ চিকিৎসা প্রতি এমন প্রীতি ও দূর্বলতাকে পূঁজি করে দেশের অধিকাংশ ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক শিল্প প্রতিষ্ঠান তথা ঔষধ কোম্পানি, ভেষজ আমদানী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। কেননা বর্তমান সরকার দেশজ চিকিৎসার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে দেশজ শিল্প সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে কর ও শুল্ক মওকুফ করেছে। তাই বর্তমান বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানিদের জমজমাট ব্যবসা চলছে। এটি বাংলাদেশের দেশজ শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর। পক্ষান্তরে এটি বাংলাদেশের দেশজ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর দেশজ চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ী রুচি বাড়ানো, স্বাস্থ্য বাড়ানো, যৌন শক্তি বর্ধক, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ,ব্যথা নিবারণ সহ নানান রোগ নিরাময়কারী ঔষধ বানিয়ে করছে রমরমা ব্যবসা। এসব ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল মেডিসিনের নামে তারা ব্যবহার করছে ডেক্সামিথাসন,সিপ্রোহেপ্টাডিন, সিন্ডেনাফিল,টাডানাফিল, মেটফরমিন, স্টেরয়েড ইত্যাদি। এসব কেমিক্যাল দূততম সময়ে রোগ আরোগ্য করলেও রয়েছে মারাত্মক সাইড ইফেক্ট, এমনকি এসব কেমিক্যালের ডোজ মেইন্টেইন না করায় লিভার,কিডনি সহ দেহের ভাইটাল অর্গানে পড়ছে বাড়তি চাপ। ফলশ্রুতিতে প্রাকৃতিক ভেষজের উপর বিশ্বাস রাখতে গিয়ে জনগন হচ্ছে প্রতারিত। এভাবে আর কিছু দিন চললে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।
এখন আসা যাক ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূলে। এই দেশীয় চিকিৎসা সেবার ধারা অব্যাহত রেখেছে এ দেশের আপামর চিকিৎসক সমাজ। বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজ চিকিৎসা শিল্পের উন্নয়ন হলেও দেশজ চিকিৎসার ধারক ও বাহক চিকিৎসক সমাজের কিবা উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে দেশজ চিকিৎসা শিক্ষার জন্য রয়েছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার মিরপুরে এমবিবিএস সমমান বিএএমএস,বিইউএমএস,বিএইচএমএস বিষয়ে পড়াশুনার জন্য রয়েছে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। এছাড়া বর্তমানের আরো ২ টি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া দেশে রয়েছে প্রায় ১৫০ টির মত ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান। ব্যাচেলর প্রতিষ্ঠান গুলো বিভিন্ন সিন্ডিকেট এর কারনে কোনঠাসা। দেশে নেই কোন গবেষণাগার, টেস্টিং ল্যাবরেটরী, নেই উচ্চ শিক্ষা তেমন কোন সুযোগ। সরকারের সুদৃষ্টি থাকা সত্বেও আমরা চিকিৎসক সমাজ আমাদের অভ্যন্তরিন নানা কোন্দল, হিংসাত্মক মনমানসিকতার জন্য দেশজ চিকিৎসার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছি।
দেশজ চিকিৎসার সংকট ও উত্তরণের পথ
বাংলাদেশ দেশজ চিকিৎসার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় দেশ। দেশজ চিকিৎসা ও শিল্পে আমরা এখনো আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারি নাই। বর্তমান সরকার যেখানে অধিক আন্তরিক। তাই বর্তমান সংকট সমাধানের উপায় হিসাবে যা করা যেতে পারে….
★ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী,স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী,স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ দেশজ চিকিৎসায় আন্তরিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন করা।
★সম্মেলনে আমাদের চিহ্নিত সমস্যাগুলো উপস্থাপন।
★ জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ইন্ডিয়ার আয়ুসের ন্যায় সতন্ত্র মন্ত্রণালয় পৃথককরণ।
★বাংলাদেশে রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন।
★ বিএমডিসিতে দেশজ চিকিৎসার অন্তর্ভুক্তি অথবা বিএমডিসির ন্যায় সতন্ত্র কাউন্সিল তৈরী।
★ যুগোপযোগী দেশজ চিকিৎসা আইন বাস্তবায়ন।
★উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা করণ।
★ সরকারি চাকরির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান।
ডাঃ মোঃ তাজিরুল ইসলাম তৌকির
বিএএমএস(ঢাঃবিঃ)