স্টাফ রিপোর্টার
ময়মনসিংহে ডিবি পরিচয়ে বাসায় ঢুকে ভবনের ছাদ থেকে ফেলে ফয়সাল খান শুভকে হত্যার ঘটনায় নাটকীয় মোড় পরিবর্তন হয়েছে। প্রেম ঘটিত কারণে পরিকল্পিতভাবে শুভকে হত্যা করা হয় বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এ পর্যন্ত পুলিশ এ মামলার অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও অন্যান্য মূল আসামীরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত বলে তাদের সস্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং হুমকীর ফলে শুভর পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জানাগেছে, ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার কাশিপুর গ্রামের সেলিম খানের ছেলে ফয়সাল খান শুভ (৩০) কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাশ করে ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডে তার বড় বোনের বাসায় থাকতো। সেখানে থেকে সে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরীর সন্ধান করে আসছিল। গত ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর রাতে সাদিয়ার পরিবারের একদল লোক নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৬ তলা ভবনে থাকা দোতলায় বড় বোনের বাসায় প্রবেশ করে। সেখানে শুভকে না পেয়ে তারা ভবনের ছয়তলায় গিয়ে শুভকে পায় এবং হত্যার উদেশ্য তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয় । এ ঘটনায় ময়মনসিংহ কোতওয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রেম ঘটিত কারণে ফয়সাল খান শুভকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এরআগেও বিভিন্ন সময় শুভকে হত্যা করা, মিথ্যে মামলায় ফাসানোর চেষ্টা করেছে প্রতিপক্ষ।
প্রকাশ, ফয়সাল খান শুভর প্রতিবেশী সুলতান আহমেদের মেয়ে সাদিয়া তাহসিনের সাথে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। এ কারণে সাদিয়ার পড়াশোনা, চিকিৎসা , ব্যক্তিগত খরচসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছিল শুভ। প্রেমের সম্পর্কের র্সূত্র ধরে সাদিয়াও শুভর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহযোগীতা নিয়ে আসছিল। সাদিয়াকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বেড়াতে যাওয়া, অন্তরঙ্গ মূহুর্ত কাটানোসহ গভীর প্রেমের জালে আবদ্ধ হয় শুভ। বিভিন্ন সময় সাদিয়া একাধিক প্রেমে জড়িয়ে আলোচিত হলেও শুভ ভালবাসার টানে এসব কথা কখনও গ্রাহ্য করেনি। গত ২০২৪ সালের জুন মাসে সাদিয়া তাহসিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এসএএস সুপারিন্টেন্ড হিসেবে যোগদান করে। আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে তার পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের দ্বারা সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে এ চাকুরীর সুযোগ পায়। চাকুরীতে যোগদান করে সেখানে তার এক ব্যাচমেট সাজ্জাদুর রহমানের সাথে আবারো নতুন করে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সাদিয়া। এ সময় দুরত্ব সৃষ্টি হয় সাদিয়া ও শুভর। এরপর শুভকে সাদিয়ার জীবন থেকে সড়িয়ে দিতে পর্ণোগ্রাফি মামলা দেয়ারসহ হত্যার পরিকল্পনা করে সাদিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। এ পরিকল্পনার মূল হোতা ছিল সাদিয়ার বাবা সুলতান আহমেদ খান, ভাই অপু ও অনির্বাণ, চাচাতো বোন দিপু। শুভ আগেভাগে বিষয়টি বুঝতে পারায় সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতো। যে কারণে সাদিয়ার পরিবারের গোপন মিশন সফল হয়নি। অবশেষে সাদিয়া তাহসিনের বাবা আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমেদ, তার ভাই ছাত্রলীগ নেতা অপু ও অনির্বাণ, চাচাতো ভাই বোন দিপু ও তপু, নিকট আত্মীয় সাকি, নাহিদ, তুষার, কাউসার, সহকর্মী ও নতুন প্রেমিক সাজ্জাদুর রহমানসহ অন্যান্যরা শুভকে হত্যার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর শুভকে ৬ তলার ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টার পর বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ১১ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে শুভর নামে একটি পর্ণোগ্রাফি মামলা দায়ের করে তারা। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিওরোসাইন্স ও হাসপাতালে ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করে শুভ। একইদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সাদিয়া তাহসিনের নব্য প্রেমিক সাজ্জাদুর রহমানের সাথে বিয়ে হয় তার।
আরো জানা গেছে, গত জুলাই আগস্ট ছাত্রজনতার গণ অভ্যুথ্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সাদিয়া ও তার পরিবারের লোকজন বিরোধী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও সাদিয়ার বাবা সুলতান আহমেদ খান বিভিন্ন সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গণহত্যাকারী বা সিরিয়াল কিলার বলে প্রচারণা চালায়। সুলতান আহমেদ একজন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং তার ভাই অপু ও অনির্বাণ স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার চাচাতো ভাই আল গাজ্জালি খান তপু সরিষা ইউপি ছাত্রলীগের সভাপতি, সাদিয়ার চাচা আব্দুস সাত্তার দুলাল সরিষা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
ফয়সাল খান শুভ হত্যা ঘটনার নাটকীয় মোড় পরিবর্তন হওয়ায় এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শুভর পরিবার। সাদিয়া তাহসিনের আওয়ামী সন্ত্রাসী পরিবারের সদস্যরা তাদের যে কোন মূহুর্তে হামলা করে হত্যা করতে পারে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার।