31 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

কলাপাড়ায় গণকের তথ্যের ভিত্তিতে ৪ জনকে মেরে আহত

মুন্সী ইউসুফ, কলাপাড়া প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গণকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারীসহ ৪ জনকে মেরে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহতরা হলেন- মিজানুর ঘরামী, তার মেয়ে কলেজ পড়ুয়া লামিয়া, স্ত্রী সাবিনা ও স্ত্রীর বোনের মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী মারুফা। এদের মধ্যে মারধরে সাবিনা বেগমের বাম পা ভেঙ্গে গেছে।
হাসপাতালের শয্যায় থেকে ভুক্তভোগী মিজানুর ঘরামী জানান, ২৭ নভেম্বর রাতে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে দূর্বৃত্তরা তাদের ঘর থেকে স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ অর্থ লুটে নেয়। পরে তিনিসহ তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ছেলে এবং স্ত্রীর বোনের কন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। কিন্তু দু’দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলে শালিস বৈঠকের নামে তাদের গোটা পরিবারের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। মিজানুর আরো বলেন, স্থানীয় এক গণকের উদ্ধৃতি দিয়ে অনৈতিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তাদের এমন নির্যাতন করা হয়।
মিজানুরের স্ত্রী সাবিনা জানান, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলে জানতে পারি অঞ্জনা রানী নামে এক নারী গণনা করে স্থানীয়দের নাকি বলেছেন আমার স্বামীর সাথে বোনের মেয়ের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে চেতনানাশক খাইয়ে এক বিছানায় থাকতে চুরির নাটক সাজানো হয়েছে। যা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ ঘটনার দিন আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ ছেলেও বাড়িতে ছিলেন। তারা সবাই মেডিসিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিছু সংবাদমাধ্যমে পর্যন্ত মিথ্যা এবং গণকের ভুল তথ্য দিয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। এখন কলেজ পড়ুয়া আমার বোনের মেয়ে মানসিক এবং শারিরিক নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, রোববার ১ (ডিসেম্বর) বিকালে হাবীব ঘরামী নীলগঞ্জ আমাদের বাড়িতে এসে শালিসে বসলে পরকীয়ার বিষয়টি গণকের উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনা করলে আমি এর প্রতিবাদ করি। এসময় জাকির, মামুনসহ বেশ কয়েকজন হাবীব ঘরামীর উপস্থিতে আমাদের সবাইকে মারধর করে। এখন উল্টো চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে পরকীয়া বলে লোক সমাজে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে গণক অঞ্জনা রানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারো পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা গণনা করিনি। শুধু কিভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে তা জানতে এসেছে সেটুকু বলেছি। কিন্তু কোন প্রমাণ ছাড়া পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি কিভাবে লোক সমাজে ছড়িয়ে দিলেন, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এদিকে শালিসদার হাবীব ঘরামী বলেন, বিষয়টি মিজানুরদের পারিবারিক ছিল। আমি কাউকে মারধর করিনি।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এক নারী থানায় এসেছিলেন। তিনি অভিযোগ দায়ের করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেনীতে আর ৭ বছরের জামিলা আক্তার বিথি খাজুরা বাহামকান্দা নুরানী মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। অবুঝ শিশু জুবায়ের মায়ের কোলে আর খেলাধুলা নিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করছে। সন্তানরা বুঝে ওঠতে পারছে না কি হবে তাদের জীবনে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠকেও মেলেনি কোনো সমাধান। কোনো উপায় না পেয়ে পটুয়াখালী নারী ও শিশু আদালতে মামলা দায়ের করেন সুলতানা সুরমা।
সুলতানা সুরমা একই উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামের মো. আবুল বাসার রাড়ি‘র একমাত্র কণ্যা। সুরমার প্রতিবেশী মো. আলতাফ সরদার বলেন, আমাদের দেখা মতে ছোটবেলা থেকে সুরমার চলার পথে কোনো ত্রæটি বিচ্যূতি আমাদের চোখে পড়ে নাই। বিয়ের আগে থেকেই দেখেছি তার মাকে সাংসারিক কাজে বেশ সাহায্য সহযোগীতা করে আসছে।
প্রতিবেশী হাজী আবদুর রহমান বলেন, সুরমার এমন ঘটনা শুনে আমিও তাদের বাড়িতে যাই। ওর শ^শুড় শ^াশুড়ীর সাথে কথা বলি। তারা কোনো কিছু আমলে নেয় না। কলাপাড়া ও কুয়াকাটার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করেও কোনো ফল পাই নাই। বর্তমানে সে তার বাবার বাড়িতে বোঝা হয়ে পড়ে আছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান শহীদ মাতুব্বর জানান, সুরমা নামের মেয়েটার বিষয়ে আমিও মীমাংসার বৈঠকে ছিলাম। তাকে তালাকও দেয় নাই, আর কোনো খোঁজ খবরও নেয় না। কি কারনে সুরমাকে মারধর করেছে, কেন রাখবে না কি দোষ বশির ও তাদের বাড়ির পক্ষ থেকে কিছুই জানতে পারি নাই। শেষ পর্যন্ত তাকে আইনের সাহায্য চাওয়ার জন্য বলেছি।
এদিকে বশির খান ফেনী জেলার সদর পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের মাষ্টার প্যাদা মহল্লার মহিন উদ্দিন এর মেয়ে শিরিনা আক্তারকে বিয়ে করে কুয়াকাটার খাজুরা গ্রামের বাড়িতে সংসার গোচাচ্ছেন ওই পরকীয়া জুটি।
অপরদিকে সুরমার বিরুদ্ধে চুরির ঘটনা উল্লেখ করে মহিপুর থানায় বশির খান একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মহিপুর থানার সহকারি উপ পরিদর্শক ইউনুস মোল্লাকে তদন্তের দায়িত্ব ভার অর্পন করে মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক সত্যতা উদ্ঘাটন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বশির খানের আবেদনের কোন সত্যতা পাওয়া যাই নাই। এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টামাত্র। তাছাড়া ওই প্রতিবেদনে স্থানীয় শালিস বৈঠকে বশির খান ও তার পরিবারের সদস্যদের গাফিলতির প্রমানের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ