নজরুল ইসলাম তোফা: আমরা জীবনে চলার পথে বহু মানুষকে “ভালোবাসা” দিয়ে দিয়ে থাকি। হয়তো আমরা কেউ বা অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে খুবই ‘আনন্দ বোধ’ করি। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের জীবনে অনেক ভালোবাসা থাকলেও তা দিতে দিতে চায় না। তবে এই আলোচনায় বলতে চাই, – কারো কম ভালোবাসা কিংবা কারো বেশি ভালোবাসা। এই মানুষরাই মানুষকে- ভালোবেসে কাছে নিবে বা আদর করবে। এতে দোষের কিছুই নেই, মানুষ ভালবাসতেই পারে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা যা, তা এখানে বলতে চাচ্ছি তাহলো, অতিরিক্ত বা বেশি ভালোবাসা। এমন “অতিরিক্ত ভালোবাসা বা অতিরিক্ত কদর” করা মোটেই উচিত নয়।
আপনার “অতিরিক্ত ভালোবাসার প্রকাশটাকে” অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অতিরিক্ত ভালোবাসার ফলেই মানুষরা নিজের দাম বাড়িয়ে ফেলবে আর আপনার ভালবাসার দাম সে মানুষ দিতেই চাইবে না। বর্তমানে এমন সমাজে প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ আছে যারা অতিরিক্ত ভালোবাসা গ্রহণের আশা করে, কিছুদিন পরে সেই মানুষ ভালোবাসা প্রদানকারী মানুষকে যেন খুবই কষ্ট দেয়।
এ পৃথিবীতে চলার পথে অনেক কিছুই আপনার জীবনে আসবে। আপনি জীবনে অনেক কিছুই অর্জন করতেও পারবেন। কিন্তু কোন কিছুই ”অতিরিক্ত” ভালো হবে না। কোন কিছুর স্বাদ অতিরিক্ত মানুষরা ধরে রাখতে পারে না, শুধুমাত্রই তাদের নিজের চরিত্রের কারণে। মানুষকে অতিরিক্ত ভালোবাসা দিলে সেই মানুষ আপনাকে খুবই সস্তা ভাবতে শুরু করবে। এই পশুতুল্য মানুষ অতিরিক্ত ভালোবাসা পেলে- “হিতাহিত জ্ঞান” হারিয়েই আপনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা, কটুবাক্য বা কটুকথা নিয়েই মত্ত হবে। এখানে বলে রাখি,- মানুষ মাত্রেই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সেই ভুলকে সংশােধন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা যে চালাতে হবে, তা কখনোই করবে না।
তাই, অতিরিক্ত সুযোগ দিলে অবশ্যই তারা মাথায় উঠে বসবে, বেয়াদবি করবে। এই শ্রেণির উজবুক মানুষরাই অতিরিক্ত ভালোবাসা কিংবা অতিরিক্ত সুখ সহ্য করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা রাখেনা। আমি বলবো যে অতিরিক্ত ভালোবাসা আর অতিরিক্ত আবেগ খুব ভালো চরিত্রের মানুষকে এক সময় অনেক কাঁদাবে। তাকে অবহেলিত হতে হবে। আবার কখনো অতিরিক্ত ভালোবাসার জন্য আপনার নিজস্ব কাজে বাগড়া দিবে কিংবা যে কোনো ভাবেই বিপদে ফেলতে পারে। এখানে আরও পরিস্কার ভাবে বলতেই চাই, আপনি যেটা চান মাঝে মাঝেই চান কিন্তু অতিরিক্ত যদি চান, তা হলে আপনি সেটা হারিয়ে ফেলবেন। তেমনি ভালবাসাটাও যদি আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় দেখান, তাহলে একদিন আপনি ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলবেন। তাই বলবো যে অতিরিক্ত ভালোবাসা একদিন ”অতিরিক্ত কষ্টের কারণ’ হয়ে যাবে। আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। তেমনি কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত ভালোবাসা নেওয়া উচিত নয়। বলে রাখি, যারা অতিরিক্ত ভালোবাসা পায় তারা ভালোবাসা ধরে রাখতে পারে না। তারা সব সময় ভালোবাসাকে অবহেলা এবং ঘৃনা করে। তবুও এখানে অবশ্যই বলবো, – আপনি মানুষকে ভালোবাসুন, কাছে নিন। তবে মানুষকে চিনে। জীবনের একটা সময়ে গিয়ে ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে চিৎকার করেই কাঁদতে হবে। কিন্তু ভালোবাসা তখন আর ধরা দেবে না। কারণ, সময় ঠিকই প্রতিশোধ নিয়ে ফেলবে।
যারা অতিরিক্ত ভালোবাসা পায় তারাই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারেনা। মনে রাখতে হবে যে ভালোবাসার মধ্যে হারানোর কোন ভয় নাই, সেই ভালবাসার প্রয়োগ করার জন্য প্রস্তুত হন। আসলে খাঁটি ভালোবাসা কিংবা প্রকৃত ভালোবাসা বর্তমান সময়ে মানুষের জ্ঞান সল্পতায় বহন করতে পারে না। আমার জীবদ্দশায় দেখছি, অতিরিক্ত ভালোবাসা বেশিদিন বাঁচানো কঠিন, কারণ ঘুনেধরা বা পচনশীল মানুষের অহেতুক কিছু ‘চাহিদা এবং প্রত্যাশা’ বেশি লক্ষ্য করবেন, এরাই এক সময় অবহেলা করবে। আপনার জানা দরকার, অতিরিক্ত ভালোবাসা একদিন অতিরিক্ত একা করে দেবে। মানুষ আপনাকে অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে সস্তা বানিয়ে ছাড়বে।
পরিশেষে এই আলোচনার নিরিখে বলবো, ভালোবেসে আমি ঠকেছি অনেক। তবুও মানুষের প্রতি ভালোবাসা অব্যাহত রাখতে চাই, আমার ভালোবাসায় কোন প্রকার স্বার্থ নেই, চাহিদাও নেই, আমার- ক্ষতি হয় হোক, কোন চাওয়া পাওয়া নেই। আমি সৃষ্টি কর্তার কিছু বানীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। হাদিস কুদসিতে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথায় এসেছে। মহান “আল্লাহ তা আলা” বলেছেন যে, – ‘আমি ছিলাম গোপন ভান্ডার; ”ভালোবাসলাম মানুষকে” প্রকাশ হতেই, তাই তো সৃজন করলাম সমুদয় সৃষ্টি। আল্লাহ তা আলার বড় কুদরতের জগতে ভালোবাসাটাই হলো, প্রথম সম্পাদিত ক্রিয়া বা কর্ম। তাই তো আমি মানুষকে ভালোবাসি।
লেখক: টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং অধ্যাপক।