31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪

তিশা-মোসতাকের প্রেমের আদি জন্মদাতাদের কথা বলছি — কলামিস্ট হারুনুর রশিদ আরজু

পাঠক, তিশা-মুশতাকের প্রেমের গল্প এখন সবার মুখে মুখে জানা বিষয়। বেশিরভাগ মানুষই তাদের বয়সের এই অসম বিয়ে মেনে নিচ্ছেন না। কিন্তু কেনো? এটা কি বাংলাদেশে আশ্চর্য হওয়ার মত নতুন কোনো ঘটনা? অথচ বাংলাদেশে এর চাইতেও বড় ঘটনার নজির রয়েছে। তাহলে কেনো সারাদেশে তিসা এবং মোসতাকের বিয়ে নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে? আমাদের দেশের মানুষ কোন একটা দম্পতির পিছু ধরলে আর ছাড়তে চায় না। সে যাক, যারা এদের নিয়ে ট্রল করছেন তাদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আমাদের দেশে আরো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের এমন ঘটনার ইতিহাস।

প্রথমে তুলে ধরবো বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের প্রেমের গল্প। যদিও তিনি ২০১৯ সালে ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। এরশাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩০ সালে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ ওরফে ডেইজী এবং দ্বিতীয় স্ত্রী দীনা ওরফে বিদিশা এরশাদ। ১৯৫৬ সালে এরশাদ ২৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন ১৩ বছর বয়সী রওশনকে। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এরশাদ ও রওশন ৬২ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন। কিন্তু তাদের কোনো সন্তান ছিল না। ২০০২ সালে এরশাদ বিদিশাকে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন তখন এরশাদের বয়স ৭২ বছর, বিদিশার বয়স ৩২ বছর, আর রওশন এরশাদের বয়স ৫৯ বছর ছিল।

এবার আলোচনা করি আমাদের সবার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের বিয়ে নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদ দুই বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমদ। তিনি হুমায়ূন আহমেদের সাথে ৩০ বছর সংসার করেন। তাদের সংসারে চারটা সন্তান হয়। কিন্তু ৫৭ বছর বয়সে হুমায়ূন আহমেদ তার নিজ কন্যার বান্ধবী ৩৩ বছরের ছোট অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এটা ছিল তাদের প্রেমের বিয়ে। তেমনি এরশাদ-বিদিশার মধ্যেও প্রেমের বিয়ে ছিল।

আজকে খন্দকার মোসতাক আহমেদ ৬০ বছর বয়সে যখন ২০ বছরের তিশাকে বিয়ে করেন, তখন আমরা বলছি এটা সবথেকে বড় পাপ করে ফেলেছেন! প্রেসিডেন্ট এরশাদ, লেখক হুমায়ূন আহমেদ প্রেম করে বিয়ে করা যদি দোষের না হয়, তাহলে খন্দকার মোসতাক ৬০ বছর বয়সে প্রেম করলে অপরাধ হবে কেনো? প্রেম করতে হলে কি বয়স ১৬ হতে হবে? বিয়ের বয়স ১৮ হতে হবে। আমাদের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ৬৭ বছর বয়সে তার থেকে ৩৮ বছরের ছোট হনুফাকে বিয়ে করেন।

মানুষের জীবনে মৃত্যু যে কখন আসবে এটা যেমন বলা মুশকিল, তেমনি কার জীবনে কখন প্রেম আসবে এটাও বলা অসম্ভব। যে কোনো বয়সে মৃত্যুর মতো প্রেম আসতে পারে। কারণ এটা সরকারী চাকরীর আবেদন নয়, যার কারণে প্রেমের কোনো বয়স সীমা নেই। অন্তত অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা এটাই বলে। তাই ওরা এই বয়সে প্রেম করলো কেনো বিয়ে করলো কেনো, এটা নিয়ে কথা বলার প্রশ্ন করার আপনি কে?

বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে ৬০ কিংবা ৭০ বছরের বৃদ্ধ লোকটি তার মেয়ের বয়সী তরতাজা তন্বী তরুণীকে কি যৌন সুখ-শান্তি দিতে পারবে? এটা একটা অবান্তর প্রশ্ন বা চিন্তা?

প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে বিদিশা যৌন জীবনে কেমন সুখী ছিলো সেটা বিদিশার মুখে শুনুন,”আমার জীবনে নতুন পুরুষ। একজন সংবেদনশীল মানুষ। বৃদ্ধ কিন্তু সক্ষম। জীবনে প্রথম ভালোবাসা পেলাম। এক সময় মনে হলো -আই অ্যাম ইন লাভ উইথ এরশাদ। আমি এরশাদের প্রেমে পড়ে গেছি। এরশাদই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেমিক”।

দেখুন, বিদিশার জীবনে তিন স্বামীর মধ্যে তার প্রথম স্বামী ছিল পারভেজ আহমেদ। তার সাথে মাত্র এক বছর ছিলেন। তার ১৪ বছর বয়সে দ্বিতীয় স্বামী পিটার হুইসেনের বয়স ছিল ২৮ এবং ৩২ বছর বয়সে এরশাদের বয়স ছিল ৭২ বছর। অথচ বিদিশা বলছেন এরশাদই তার একমাত্র প্রেমিক। আরও মজার বিষয় হলো এরশাদের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়েছিল ২০০৫ সালে, আজ পর্যন্ত বিদিশা আর বিয়ে করেননি। কেনো? কারণ তিনি এরশাদের ভালোবাসা ভুলতে পারেননি।

শাওন ২৪ বছর বয়সে ৫৭ বছরের লেখক হুমায়ূন আহমেদকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে দুইটা সন্তান হয়। মাত্র ৮ বছর সংসার করার পর ৩২ বছর বয়সে শাওন বিধবা হন। আজ পর্যন্ত আর বিয়ে করেননি। একমাত্র কারণ বয়ষ্ক স্বামীর ভালবাসার মায়া ত্যাগ করতে পারছেন না।

তিশা একজন স্মার্ট সুশিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক সচেতন নারী। তিশার কাছে খন্দকার মোসতাককে ভালো লাগে, এতে আমার আপনার করার কী আছে? আপনি কেনো তাদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন? তিশা কি কোনো মিডিয়ার কাছে তার কোনো কষ্টের কথা বলেছে? বরং তাকে খুব প্রাণবন্তভাবে ও খোশমেজাজে কথা বলতে দেখা যায়। তার সাথে কোনো প্রকার অন্যায় বা জবরদস্তি করা হলে সেকথা মিডিয়ার কাছে বলার সুযোগ ছিল বা আছে। বরং আমরা দেখেছি সে তার পিতার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছে মিডিয়ার কাছে। তিশার বক্তব্য অনুযায়ী আসল কালপিট তো তিশার পিতা নিজেই। সে তার মেয়েকে খুব অত্যাচার নির্যাতন করতো। সে তার মেয়ের ভালোবাসা মেনে নিলে এতোটা রাষ্ট্র হতো না।

আজকে যারা তিশা-মোসতাকের বিয়েকে অসম বয়সের বলছেন, সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলছেন, তারা কি অতীতের গুরুদের বিয়ের কথা ভালোবাসার কথা ভুলে গেছেন? দোষ যদি দিতে হয় তাহলে প্রসিডেন্ট এরশাদ-লেখক হুমায়ূন আহমেদ-মন্ত্রী মুজিবুল হক, তাদের বিয়ের কর্মকাণ্ডকে দোষ দিতে হবে। কারণ অসম প্রেমের এই রীতি তাঁরাই চালু করেছিলেন, খন্দকার মোসতাক বা তিশা নয়।
__________________
লেখকঃ হারুনুর রশিদ আরজু,
কলামিস্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী।



- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ