31 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

রুদ্ধশ্বাস মহাকাব্যিক ফাইনালে অবশেষে আর্জেন্টিনার জয়, ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে দিয়েগোকে ছুঁলেন মেসি

মেগা ফাইনালে শুরু থেকেই ছিল সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। চোরা মার তো ছিলই। সঙ্গে ছিল আর্জেন্টাইনদের গোল পাওয়ার তাড়া। ডান দিকের উইং প্লে-কে আরও সক্রিয় করতে এদিন প্রথম থেকেই নেমেছিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। তাঁর দিক থেকে চলছিল একের পর এক আক্রমণ। খেলা দেখে মনে হচ্ছিল বিপক্ষ ফ্রান্স নয়। এবারও যেন সেই ২০১৪ সালে মারাকানার মতো সামনে রয়েছে জার্মানি।

আর্জেন্টিনা: ৩ (‘২৩ পেনাল্টি , ‘১০৮ মেসি, ‘৩৬ ডি মারিয়া)

ফ্রান্স: ৩ (‘৮০, ‘৮১, ‘১১৮ পেনাল্টি এমবাপে)

টাইব্রেকার

আর্জেন্টিনা: ৪

ফ্রান্স: ২

রুদ্ধশ্বাস মহাকাব্যিক ফাইনালে অবশেষে জয়। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে দিয়েগো মারাদোনাকে (Diego Maradona) ছুঁলেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। কিলিয়ান এমবাপের (Kylian Mbappe) লড়াইয়ের পরেও ফাইনাল জিতল আর্জেন্টিনা (Argentina)। টাইব্রেকারে সেই আর্জেন্টিনার ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন সেই এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (Emiliano Martinez)। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেরা ফাইনাল। গোটা ম্যাচ জুড়ে বার বার বদলাল খেলার রং। প্রথমার্ধে লিয়োনেল মেসি ও আঞ্জেল ডি মারিয়ার (Angel Di Maria) গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে জোড়া গোল করলেন এমবাপে। অতিরিক্ত সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন মেসি। খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হল খেলার ফয়সালা। সেখানে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা।


মাত্র দুই মিনিটে এমন ভাবে খেলা বদলে যেতে পারে! মেগা ফাইনালের ৮০ মিনিট না এলে বোঝাই যেত না। মাত্র ৯০ সেকেন্ডে দুটি গোল করে এমবাপে শুধু ম্যাচই ঘুরিয়ে দিলেন না, মনে হচ্ছিল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নকেও চুরমার করে দেবেন! ‘ক্রিকেট ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা’। যারা এত বছর এই কথাটা লিখে আসতেন, তাঁরা ৮০ হাজারের লুসেল স্টেডিয়ামের এই মেগা ফাইনাল দেখে থাকলে, ফুটবলের ক্ষেত্রেও এই বাক্য ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন। প্রথমে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার পরেও, এভাবে খেই হারিয়ে যায় কোনও দল! তবে মনে হয়েছিল সব হিসেব বদলে দিয়েছিলেন মেসি। ১০৮ মিনিটে গোলটা করে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনিই ফুটবলের শেষ কথা। কিন্তু না। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে আরও নাটক মঞ্চস্ত হওয়া বাকি ছিল। এমবাপের শট আটকাতে গিয়ে বক্সের মধ্যেই বল হাতে লাগালেন মন্তিয়েল। সেখান থেকে হ্যাটট্রিক করে ফের ফ্রান্সকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন ২৩ বছরের তারকা। ফলে অতিরিক্ত সময় খেলার ফলাফল ছিল ৩-৩। তবে শেষরক্ষা হল না। টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জিতে তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বজয়ী হল আর্জেন্টিনা।

২-২ অবস্থায় অতিরিক্ত মিনিটে ১০৮ মিনিটে দুরন্ত আক্রমণে গোল দিলেন মেসি। লাউতারো মার্টিনেজের শট দারুণ ভাবে বাঁচিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। ফিরতি বল মেসির হাঁটুতে লেগে গোলে ঢুকে গেল। বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল হয়ে গেল মেসির। ফ্রান্স অফসাইডের আবেদন করেছিল। কিন্তু ভার-এর চিত্রে দেখা গেল, ফ্রান্সের ডিফেন্ডার কিছুটা ভেতরে ঢুকে ছিলেন। আর সেই গোলের সুবাদেই মেসি তাঁর কেরিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ জিতে নিলেন। তখন মনে হচ্ছিল জলে গেল এমবাপের লড়াই। ঠিক এমন মোক্ষম সময় গোল করে আবার ফ্রান্সকে খেলায় ফিরিয়ে এনেছিলেন এই স্ট্রাইকার। ১১৮ মিনিটে বলটা আর্জেন্টিনার জালে ঢুকতেই স্কোরলাইন হয়ে গেল ৩-৩।


এর আগে ফ্রান্সের আক্রমণের সময় বক্সের মধ্যে হাঁটু দিয়ে কোলো মুয়ানিকে মারেন ওটামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপে। পরের মুহূর্তেই আবার আক্রমণ করে ফ্রান্স। ডান দিক থেকে এমবাপেকে লম্বা বল বাড়িয়েছিলেন কোমান। হাঁবিয়ের সঙ্গে দ্রুত পাস খেলে মাটিতে পড়ে যেতে যেতে অনবদ্য শটে গোল করে সমতা ফেরালেন ২৩ বছরের তারকা। আর সেই গোলের সঙ্গে মেসিকে ছাপিয়ে চলতি কাপ যুদ্ধে সাতটি গোল করে ফেললেন। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালেও গোল করেছিলেন এমবাপে। এ বারও করলেন। সঠিক সময়ে দুরন্ত প্রত্য়াবর্তন করল ফ্রান্স। ফলে একটা সময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ফ্রান্স, এই ম্যাচকে নিয়ে চলে গেল অতিরিক্ত সময়ে। সেই সময় বারবার আক্রমণ করেও লাভ হল না। একেবারে সহজ গোলের সুযোগ হেলায় হারালেন লাউতারো মার্টিনেজ। তবে এবার দলকে ফের খাদের কিনারা থেকে টেনে তুললেন মেসি। তবে লাভ হল না। কারণ তাঁর দলকে বারবার কঠিন চ্যালেঞ্জ দিলেন এমবাপে।

শুধু লড়াইয়ের আর নাম লিওনেল মেসি নয়। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক দেখিয়ে দিলেন যে প্রতিশোধের আর এক নামও লিওনেল মেসি। চার বছর আগে এই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ৩-৪ ব্যবধানে হেরে ছিটকে গিয়েছিল তাঁর দল। তবে জিতলেও এই জয় সহজে আসেনি। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত স্কোরলাইন ৩-৩ থাকার পর, টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতল আর্জেন্টিনা। সৌজন্যে এমবাপের লড়াই। কাতার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচের আগে তাঁর নাম নিয়েই মেতেছিল গোটা ফুটবল দুনিয়া। মাঠে নেমে পায়ের জাদুতে বিপক্ষকে বোকা বানাবেন, গোল করবেন- এই আশাতেই ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। সকলের মনোবাসনা পূরণ করলেন ফুটবলের রাজপুত্র। পেনাল্টি থেকে হলেও, গোল পেলেন মেসি। ফাইনাল খেলতে নেমে একাধিক রেকর্ড ভাঙলেন। আর তাই ফ্রান্সকে একেবারে ক্লাবস্তরে নামিয়ে ৩৬ বছর পর ফের বিশ্বজয়ী হল আর্জেন্টিনা। ফুটবল ‘আইডল’ দিয়েগো মারাদোনাকে ছুঁলেন মেসি। তাও আবার নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে। ম্যাচটা শুধু মাঠে নেমে মেসির এগারো জন যোদ্ধারা জিতলেন না। মাঠের বাইরে ক্ষুরধার মস্তিস্কের উপর ভর করে বিশ্বজয়ী হলেন লিওনেল স্কালোনি। সবচেয়ে কম বয়সী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেলেন ৪৪ বছরের এই ‘লো প্রোফাইল’ কোচ। টেক্কা দিলেন পোড়খাওয়া দিদিয়ের দেশঁ-কে।

বেশ কয়েকবার ফরাসি ডিফেন্সের সামনে আটকে গেলেও, সেই ডি মারিয়াই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিলেন। আলভারেজ থেকে বল নিয়েই বক্সে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ডি মারিয়া। ঠিক সেই সময় তাঁকে পিছন থেকে ফাউল করেন ডেম্বেলে। রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল ‘প্লে-অ্যাক্টিং’ করছেন ডি মারিয়। তবে পোল্যান্ডের রেফারি সাইমন মার্সিনিয়াক তাঁর সিদ্ধান্ত বজায় রাখেন। তিনি ‘ভার’-এর সাহায্য পর্যন্ত নেননি।


২৩ মিনিটে পেনাল্টি নেওয়ার সময় সেই ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচের রিপ্লে! মেসি চোখ বন্ধ করে কি যেন ভাবলেন! এরপর মুখ ঘুরিয়ে চোখ রাখলেন বাঁহাতে রাখা ‘ক্যাপ্টেন আর্মব্যান্ড’-এর দিকে। এরপর বাকিটা তো ইতিহাস। হুগো লরিস ডান দিকে শরীর ছুঁড়ে দিলেও লাভ হয়নি। কারণ ‘মারাদোনার বরপুত্র’ বাঁ পায়ে নেওয়া গোলার মতো শট পোস্টের বাঁ দিক থেকে জালে জড়িয়ে যায়। ফলে চলতি প্রতিযোগিতা মেসির ষষ্ঠ গোলের সাক্ষী থাকল। সঙ্গে সঙ্গে দুলে ওঠে লুসেল স্টেডিয়ামের নীল-সাদা গ্যালারি।

সেই গোলটা করেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে-কে ছুঁয়ে ফেললেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ২৬টি ম্যাচে করলেন ১২টি গোল। সঙ্গে রয়েছে আটটি রয়েছে। মোট ২০টি। এ ছাড়া, প্রথম ফুটবলার হিসাবে গ্রুপ পর্ব, প্রি-কোয়ার্টার, কোয়ার্টার, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে গোল করলেন ‘এল এম টেন’।

পিছিয়ে যেতেই কেমন যেন গুটিয়ে গেল গতবারের বিশ্বজয়ীরা। আর মহারণে ব্যাকফুটে চলে গেলে তো বিপক্ষ এর সুবিধা নেবেই। আর সেটাই করল আর্জেন্টিনা। এবার দলকে এগিয়ে দিলেন ডি মারিয়া। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। প্রায় মাঝমাঠ থেকে সোনার পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁর সেই ফ্লিক করা পাস থেকে বল নিয়েই দৌড় লাগালেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ফ্রান্সের ডিফেন্স পুরো ফাঁকা। দলের পতন আটকানোর জন্য অ্যালিস্টারের সামনে শুধু হুগো লরিস। তবে অ্যালিস্টার নিজে শট না নিয়ে টিম গেমের পরিচয় দিলেন। বল বাড়ালেন ডি মারিয়ার দিকে। তাঁর থেকে পাস পেয়ে চলতি বলে শট নিয়ে গোল করলেন চোট সারিয়ে ফিরে আসা ডি মারিয়া। আর তাই হয়তো আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্যাচে গোল করে কেঁদে ফেলেছিলেন এই তারকা।

প্রথমার্ধ জুড়ে শুধুই আর্জেন্টিনা। জিরুর অসাধারণ একটি হেড ছাড়া ফ্রান্সের দিক থেকে সেরকম কিছুই চোখে পড়েনি। আর্জেন্টিনার বক্সে সেভাবে বল গেলই না। জিরু আর ডেম্বেলেকে তুলে নিলেন হতাশ দেশঁ। পরিবর্ত হিসাবে থুরাম ও মুয়ানি নামলেও সেরকম পার্থক্য গড়তে পারলেন না। দু’গোলে পিছিয়ে থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরল ফ্রান্স। কিন্তু ৮০ মিনিটে এমবাপের জোড়া গোলে ফ্রান্স এমন কামব্যাক করবে সেটা কেউ ভাবতেই পারেননি। তাঁর লড়াইয়ের জন্যই মেসিদের অনায়াসে জেতা ফাইনাল চলে গেল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও দেখা গেল মেসি বনাম এমবাপের লড়াই। ফলে অতিরিক্ত সময় খেলার ফলাফল দাঁড়াল ৩-৩। তবে শেষরক্ষা হল না। টাইব্রেকারে সেই আর্জেন্টিনার ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন সেই এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ৪-২ গোলে টাইব্রেকারে জিতে দিয়েগো মারাদোনাকে ছুঁলেন মেসি।

শুরু থেকেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মেসি। যখনই বল আসছে, তিনি কোনও না কোনও ভাবে সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। দেখে নিয়েছেন কোথায় কোন সতীর্থ রয়েছেন। সামান্যতম ফাঁক পেলেই পাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এমবাপে সেই তুলনায় অনেক ম্রিয়মান। স্কালোনির ছকে ফরাসি তারকাকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলেন ডিফেন্ডাররা। এমনকি, এমবাপেকে যিনি বল জোগান, সেই গ্রিজম্যানের সঙ্গে তাঁর সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এমবাপে জোড়া গোল করে কাঁপিয়ে দিলেন অগণিত আর্জেন্টাইনদের।

বিদায় বলতে শুধুই বিশ্বকাপকে বিদায়, হয়তো আন্তর্জাতিক ফুটবলকেও। কিন্তু ক্লাব ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো চিন্তা তো শোনা যায়নি এখনও। মেসিকে হয়তো এরপরও দেখা যাবে মাঠে, তবে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শেষবারের মতো দেখা গেল। স্কালোনি এই বিশ্বকাপে কথাটা আগেও বলেছেন। ফাইনালের আগে বলেছিলেন, ‘লেটস এনজয় মেসি।’

হ্যাঁ, মেসি তো ‘এনজয়’ করারই জিনিস। খেলা দেখার অনেক দিন পরও মানুষ কী মনে রাখে? মনে রাখে, মোমেন্টস। বাংলায় ‘মুহূর্ত’ বলা যায়। যদিও তাতে হয়তো ঠিক বোঝানো যায় না। অনেক দিন পর একটা ফুটবল ম্যাচের একটা গোল, একটা অ্যাসিস্ট, একটা ড্রিবলিং, একটা দৌড়…এসবই তো চোখে ভাসে।

এই বিশ্বকাপেই এমন কতগুলো হিরণ্ময় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন মেসি, একবার মনে করে দেখুন তো! মেক্সিকো আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই দুটি গোল। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে মোলিনাকে ‘অ্যাসিস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’, ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ওই সর্পিল দৌড়…পড়তে পড়তে ভাসছে না সব চোখে! তাই তিনি যদি বিশ্বকাপ না জিততেন তাহলে মেসির প্রতি অন্যায় হত।

বিশ্বকাপ জিতলেই সর্বকালের সেরা কি না, না জিতলেই–বা কেন নয়—এসব তর্ক বরং থাক। বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির শেষ ম্যাচ। বিশ্বকাপ জিতে বিদায় নিতে পারলে ভালো। না পারলেও মনে রাখার মতো অমন আরও কিছু ‘মোমেন্ট’ যেন দিয়ে যেতে পারেন।

লেটস এনজয় মেসি!

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ