31 C
Dhaka
রবিবার, মে ৫, ২০২৪

রাজনেতিক সংকট নিরসনের ব্যবস্থা নিতে হবে এক্ষুনি !

বৃটিশ বুদ্ধির ঘোর চক্কর থেকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক জটলা নিরসনে নানাজন নানা কিছু ভাবছেন। তবে এদের কেউই সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যা উত্তরনের গ্রহনযোগ্য কোনো সূত্র এখন অব্দি দিতে পারেনি।

লেখার শুরুতেই ‘বৃটিশ বুদ্ধি’ শব্দটি কেন ব্যবহার করলাম এর ব্যাখ্যা দিচ্ছি।

গোটা বিশ্বে দুই পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু আছে-রাষ্ট্রপতিচালিত সরকার ব্যবস্থা এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে চালিত সরকার ব্যবস্থা। যে কোনো বিষয়ে উদ্ভট পদ্ধতি আরোপের মাধ্যমে গন্ডগোল পাকিয়ে দেয়ায় বৃটিশদের জুড়ি নেই। ওদের আবিষ্কৃত রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতির নাম ‘ওয়েস্টমিনিস্টার’ পদ্ধতি যাকে আমরা সংসদীয় পদ্ধতি হিসেবে জানি। এই পদ্ধতির অনুসরণ যেসব দেশে হচ্ছে সেখানেই চলছে গন্ডগোল। পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই সংসদীয় পদ্ধতির কারনে রাজনীতি এবং গণতন্ত্র যেমন ঘোর চক্করে পরছে ঠিক তেমনিভাবে তৈরি হচ্ছে নানান জটিলতা। থাইল্যান্ডে ক’দিন আগে সাধারণ নির্বাচন হলো অথচ সেখানে এখনও রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব কে পাবেন তা নিয়ে রীতিমতো পিংপং খেলা চলছে। পাকিস্তানে তো এই পদ্ধতির কারনে সবকিছু এতোটা গুবলেট পাকিয়ে গেছে যে, অনেকেই ভাবছেন এর চূড়ান্ত ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দেশী-বিদেশী অপশক্তি নানা খেলা চালাচ্ছে। পশ্চিমারা বলছে আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। আমরাও একই কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের স্বার্থে অবাধ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের মগজে ঘুরছে ভিন্ন মতলব। ওরা নানা অজুহাতে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। এদিকে দেশীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বলছে আগামী নির্বাচনে তাঁরা ক্ষমতায় এলে ইসলামী গণতন্ত্র পদ্ধতি চালু করবে। সমাজবিজ্ঞান কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ইসলামী গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। পবিত্র কোরআনে শরীয়াহ্ পদ্ধতি কিংবা খেলাফত পদ্ধতির কথা বলা আছে। কিন্তু গণতন্ত্রের কথা নেই। আদতে গণতন্ত্র হলো সেক্যুলার পদ্ধতি। যা ভারতে বিদ্যমান। বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যমান। যদিও ভারতে বৃটিশ সৃষ্ট ‘ওয়েস্টমিনিস্টার’ পদ্ধতিতে পরিচালিত সরকার ব্যবস্থার কারনে গণতন্ত্র বারবার ধাক্কা খাচ্ছে।আর ক্ষমতাসীন বিজেপি’র নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী তো এরই মাঝে সেক্যুলার গণতন্ত্রকে মর্গে পাঠিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গণতন্ত্র নামের এক উদ্ভট পদ্ধতির চালু করেছেন যার ফলে ভারতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন সবকিছুই এক টালমাটাল অবস্থায় পরেছে।

ইসলামী গণতন্ত্র বলে যেমন কিছু নেই তেমনিভাবে হিন্দুত্ববাদী গণতন্ত্র বলেও কিছু নেই। গণতন্ত্রের গায়ে যখন ধর্মের চাদর জড়িয়ে দেয়া হয় তখন সেটা আর গণতন্ত্র থাকে না। কারন ধর্ম হলো আধ্যাতিকতার বিষয় আর রাজনীতি কিংবা গণতন্ত্র হলো রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি। দুটোর প্রেক্ষাপট এবং গন্তব্য একেবারেই ভিন্ন। জানিনা কেন পশ্চিমারা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইসলামপন্থী বিএনপি বা সমমনা দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে বাংলাদেশে কথিত ইসলামী গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে চূড়ান্ত অস্থিরতার দিকে দেশকে ঠেলে দেয়ার মতলব আঁটছেন।

পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমাদের সবার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে দেশ। এ কারনে সংকট উত্তরণে আমাদেরকেই সঠিক পদ্ধতিটি বেছে নিতে হবে। এক্ষত্রে আমার মনে হয়, ‘বৃটিশ বুদ্ধি’র সৃষ্ট সংসদীয় পদ্ধতিতে পরিচালিত সরকার ব্যবস্থার বদলে আমাদেরকে রাষ্টপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে এটা করতে হবে এক্ষুনী। এজন্যে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে চলতি সংসদ মেয়াদেই। এটা করার পর প্রয়োজনে আমেরিকার মতো রাষ্ট্রপতি ও পার্লামেন্ট নির্বাচন করা যাবে। জনগনের ভোটে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ও আইন প্রনয়নকারী সংসদ সদস্য নিবার্চিত হবে। আমেরিকার মতোই নির্বাচিত সাংসদগনের মন্ত্রী হবার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যোগ্য লোকদের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী পরিষদের কর্মকান্ড সুগভীরভাবে নিরীক্ষা করবে সংসদ। প্রয়োজনে সংসদ দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে রাষ্টপতির ওপর অভিশংসন আনতে পারবে। তারমানে রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতা আর কারও হাতেই একচ্ছত্রভাবে চলে যাবে না। এভাবেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরো সমৃদ্ধ হবে, রাজনৈতিক সংকটাপন্ন পরিস্থিতির উত্তরণ হবে, দেশও রক্ষা পাবে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কবল থেকে।

তাজুল ইসলাম
সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ