31 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

তাহিরপুর সীমান্তে সোর্সরা বেপরোয়া: চোরাই গুহায় পড়ে যুবকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে সোর্স পরিচয়ধারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে প্রতিদিন সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবাধে কয়লা, পাথর, চিনি, পেয়াজ, গরু, মহিষ, সুপারী, নাসির উদ্দিন বিড়ি ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪) সন্ধ্যায় আইয়ুব আলী (২৮) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওই যুবক উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনী লাইন গ্রামের মজলু মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোর থেকে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের রজনীলাইন, বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া ও চুনাপাথর খুনি প্রকল্প এলাকা দিয়ে গডফাদার তোতলা আজাদের নেতৃত্বে সোর্স পরিচয়ধারী শামীম মিয়া, কামাল মিয়া ও ইসাক মিয়া বিজিবির নামে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চোরাই কয়লা থেকে ৫০টাকা ও সাংবাদিক-পুলিশের নাম ভাংগিয়ে সোর্স আক্কল আলী, শুভ্রত দাস, জম্মত আলী, রতন মহলদার, কামরুল মিয়া প্রতি টন চোরাই কয়লা থেকে ১হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে শতশত লোক দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও মাদকদ্রব্যসহ চিনি, পেয়াজ, সুপারী, সবজি, মাছ ইত্যাদি পাচাঁর শুরু করে। একই ভাবে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট ও লাকমা এলাকা দিয়ে ইয়াবা কালাম মিয়া, হোসেন আলী, জিয়াউর রহমান জিয়া ও মনির মিয়াগং, লাউড়গড় সীমান্তের দশঘর, পুরান লাউড়, সাহিদাবাদ, যাদুকাটা নদী, বারেকটিলা পয়েন্ট দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী জসিম মিয়া ও বায়েজিদ মিয়াগং, চাঁনপুর সীমান্তের কড়ইগড়া, রাজাই, গারোঘাট, নয়াছড়া, রজনী লাইন পয়েন্ট দিয়ে সোর্স আবু বক্কর, আলমগীর, রফিকুল ইসলাম, সাহিবুর মিয়াগং, চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে সোর্স রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, রিপন মিয়া, স্বপন মিয়া, বাবুল মিয়া, দীপক দাস, সোহেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, শরাফত আলী ও শামসুল মিয়াগং ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন এলাকা দিয়ে গোলাম মস্তোফা, লেংড়া জামাল, মনির মিয়া, হযরত আলী, সুমন মিয়া, আলী হোসেনগং কয়লা, সুপারী, চিনি ও মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে।
এমতাবস্থায় ওইদিন সকাল ৮টায় টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গা ছড়া এলাকার চোরাই কয়লার গুহায় শ্রমিক আইয়ুব আলীর মাথা পাথর পড়লে তার চোখ ও মাথার মগজ শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। এঘটনায় ওই শ্রমিক ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পড়ে সাথে থাকা অন্য শ্রমিকরা বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে মৃত শ্রমিকের লাশ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ বিকেলে মৃত শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে। এরআগে গত ৫ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় কয়লা পাচাঁরের সময় সোর্স রফ মিয়া ট্রলির নিচে চাপা পড়ে অনিন্দ্র দাস (১৩) এর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ৩ মাসে বালিয়াঘাট সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। আর লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে এই পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এতকিছুর পড়েও সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের গডফাদারের আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে তারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সেই সাথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন কোটিকোটি টাকার চোরাচালান বাণিজ্য করে ওরা এখন কোটিপতি। তাই এব্যাপারে সংশ্লিস্ট প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন কয়লা পাচাঁরের করতে গিয়ে যুবকের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান- থানা-পুলিশের কোন সোর্স নাই, সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধ করার দায়িত্ব বিজিবির। মৃত যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে জানাতে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমানের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬০৩১৩০) নাম্বারে বারবার কল করার পরও কেউ ফোন রিসিভ না করার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া
সুনামগঞ্জ
তারিখ: ১৫.০৩.২৪ইং
মোবাইল: ০১৭১৫-৬৪৩৮৮৭

- Advertisment -

সর্বশেষ সংবাদ